ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর

  ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর

ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর




প্রশ্নোত্তর:

ব্যাংকে ‘এফ.ডি.আর’ করেছে মসজিদ কমিটি।এফ.ডি.আর.’ হতে প্রতি মাসে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে ইমামমুয়াজ্জিন  মসজিদের খাদেমদের মাসিক সম্মানি এবং মসজিদের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা জায়েয হবে কিনা?

 প্রশ্ন: ব্যাংকে ‘এফ.ডি.আর’ করেছে মসজিদ কমিটি। যা মসজিদের আয়ের উৎস। প্রশ্ন হচ্ছে ‘এফ.ডি.আর.’ হতে প্রতি মাসে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদের খাদেমদের মাসিক সম্মানি এবং মসজিদের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা জায়েয হবে কিনা? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: আল্লাহ্ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও পবিত্রতাকে ভালবাসেন এবং পবিত্রতাকে গ্রহণ করেন। মসজিদ আল্লাহর একমাত্র পবিত্র ঘর যেখানে মুসলমানগণ পাক পবিত্র হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করেন। তাই মসজিদের ব্যয় নির্বাহ্ তথা মসজিদের খতিব, ইমাম, নায়েবে ইমাম ও খাদেমদের সম্মানির ব্যবস্থাও পবিত্র ও হারাম মুক্ত হওয়া অত্যাবশ্যক। অর্থাৎ মসজিদের ব্যয় নির্বাহ্ সুদ বা হারামের অবকাশ হতে মুক্ত হওয়া চায়। 


বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং লেনদেনে ব্যাংকে টাকা জমা দানকারী (ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান)কে (D.P.S ও F.D.R ইত্যাদি) ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট হারে শতকরা যে হারে ইনট্রেস্ট বা লভ্যাংশ প্রদান করে থাকে, তা যদিও বর্তমান যুগের কিছু কিছু মুফতি/ফকিহ উক্ত লভ্যাংশকে সুদের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রখ্যাত হক্কানী মুহাক্কিক ফোকাহায়ে কেরাম তা সুদের অবকাশ হতে মুক্ত নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

তাই এসব টাকা মসজিদের খতিব, ইমাম, নায়েবে ইমাম ও খেদমতগার-এর সম্মানি প্রদান না করাই যুক্তিযুক্ত এবং এটাই সতর্ক ও নিরাপদ।

যেহেতু এ জাতীয় ব্যাংকিং লভ্যাংশ/ইনট্রেস্ট সুদের অবকাশ হতে মুক্ত নয়। [অকারুল ফতোয়া কৃত: মুফতি অকারুদ্দীন বেরলভী রাহ.]


প্রশ্নোত্তরজামাতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন?

প্রশ্ন: আমাদের এলাকার মসজিদে নামাযের জামাত শুরু করার পূর্বে ইমাম এবং মুসল্লি দাড়িয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু আমি শুনেছি এটি সুন্নাত নয়। তাই ক্বোরআন ও হাদীসের আলোকে জানিয়ে উপকৃত করবেন।
 

উত্তর: আজকাল কিছু কিছু মসজিদে পঞ্জেগানা ও জুমার জামাতের ইকামত শুরু করার পূর্বে অথবা শুরু করার সাথে সাথে ইমাম ও মুকতাদীকে দাড়িয়ে যেতে দেখা যায়। যা হাদীস শরীফ ও সুন্নাতের পরিপন্থি। এমনকি শরীয়তের মাসআলা হল- ইক্বামত প্রদানকালে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সেও বসে যাবে। অনুরূপ যে সকল মুসল্লি আগ থেকে মসজিদে অবস্থান করছেন তারাও বসে থাকবে। ইমামের জন্যও একই হুকুম। আর যখন মুক্বাব্বির/মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস্ সালাত’ বা ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’ বলবেন তখন ইমাম ও মুসল্লিগণ দাঁড়াবেন।

[ফতোয়ায়ে আলমগীরি] এটাই সুন্নাত। প্রসঙ্গে হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে-

عن اُمّ حبيبة أنَّ رسول الله صلى عليه وسلم كان فى بيتها فَسَمِعَ المؤذِّنَ فقال كما يقول: فلمَّا قال حتَّى عَلَى الصَّلَاةِ نَهَضَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم الى الصّلاة-

অর্থাৎ- হযরত উম্মে হাবিবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইকামতের আওয়াজ তাঁর হুজরা শরীফে থাকতেই শুনতে পেতেন। অতঃপর মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়্যা আলাস্ সালাহ্’ বলতেন (তখন হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে)

 তিনি নামাযের জন্য (মুসল্লায়) দাঁড়িয়ে যেতেন।

[আল্ মুসান্নাফ- ইমাম আবদুর রায্যাক, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৮১, হাদীস নম্বর ১৮৫১]

হানাফী মাযহাবের অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

ولَعَلَّهُ عليه السلام كان يخرج من الحجرة بَعدَ شروع المؤذّن فى الاقامة ويَدْخلُ فى محراب المسجد عند قوله حتى عَلَى الصلاة ولذا قال ائِمّتُنَا: ويقوم الامام عند حتى على الصلاة-

অর্থাৎ- সম্ভবত তিনি (প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মুয়াজ্জিন ইক্বামত শুরু করার পর হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন এবং মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস্ সালাহ্’ বলার সময় মসজিদে নববীর মেহরাবে (ইমামতির স্থানে) প্রবেশ করতেন। এজন্য আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমামগণ বলেছেন ‘হাইয়্যা আলাস্ সালাহ্’ বলার সময় ইমাম ও মুসল্লিগণ নামাযের জন্য দাঁড়াবেন।

[মিরকাত শরহে মিশকাত: ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রাহ., ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৫২] 

পাক-ভারত উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ‘আশিয়াতুল লুমআত শরহে মিশকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-

قال الفقهاء يقومون عند هذا اى قوله حتّى عَلَى الصّلاة-

অর্থাৎ- ফুকাহায়ে কেরাম বা ইসলামী আইন বিশারদগণ বলেছেন, ‘‘মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়্যা আলাস্ সালাহ্’ বলবেন তখনই ইমাম ও মুসল্লিগণ দাঁড়িয়ে যাবেন।’’ [৩য় খন্ড, পৃৃষ্ঠা ৩৫] 

মুয়াজ্জিন যখন ইক্বামতে ‘হাইয়্যা আলাস্ সালাহ’ শেষ করবেন ইমাম ও মুসল্লিগণ তখন দাঁড়ানোই শরীয়ত সম্মত ও সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর যথাযথ অনুসরণ। ইসলামী ফিক্হের অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে ‘হাইয়্যা আলাস্-সালাহ্’ এর স্থলে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ্’-এর সময় ইমাম ও মুসল্লিগণ দাঁড়াবেন এমর্মে ফতোয়া/ফায়সালা দেয়া হয়েছে সুতরাং সবাইকে সুন্নাতের উপর আমল করার চেষ্টা করতে হবে।


 

প্রশ্নোত্তরফরজ নামায জমাতসহকারে আদায হওয়ার পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে সাথে নিয়ে মুনাজাত করা জায়েয কিনা?


প্রশ্ন: ফরজ নামায জমাতসহকারে আদায হওয়ার পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে সাথে নিয়ে মুনাজাত করা জায়েয কিনা? কেউ কেউ এটাকে না-জায়েয ও বিদআত বলে। মুনাজাতের গুরুত্ব আলোচনা করার অনুরোধ রইল।

উত্তর: দো’আ বা মুনাজাত আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝে উত্তম সেতুবন্ধন। দো’আ/মুনাজাত মূলত: বিপর্যস্ত হৃদয়ের আশ্রয়স্থল ও ইবাদতের মূল। ইসলাম দো’আকে স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। দো’আ/মুনাজাত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন-

أجيب دَعْوَةَ الدّاعِ اِذا دَاعَانِ- (البقرة- ১৮৬) 

অর্থাৎ- আমি আহ্বানকারী/মুনাজাতকারীর আহ্বানে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে বা আমার দরবারে মুনাজাত করে। [সূরা বাক্বারা: আয়াত-১৮৬] তাই আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর দরবারে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে প্রার্থনার হস্ত সম্প্রসারণকারী বান্দার দো’আ অবশ্যই শুনেন এবং কবুল করেন। 

ফরয হউক বা নফল যে কোন নামাযের সালাম ফিরিয়ে উভয় হাত উপরের দিকে তুলে মহান আল্লাহর দরবারে দো’আ করা শরীয়ত সম্মত, যা ক্বোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও ফুকাহা-ই কেরামের বাণী দ্বারা প্রমাণিত। যেমন মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন- 

فاذا فَرَغْتَ فَانْصَبْ وَالى رَبِّكَ فَارْغَبْ- 

অর্থাৎ- (হে প্রিয় হাবীব) যখন আপনি নামায থেকে অবসর হবেন, তখন দো’আর মধ্যে লেগে যান এবং আপনার প্রভুর দিকে মনোনিবেশ করুন।  
 [সূরা ইন্শিরাহ: আয়াত- ৭-৮] 

উক্ত আয়াতে কারীমা নামাযের পর মুনাজাতের স্পষ্ট প্রমাণ।

 যেমন বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে জালালাইনে’ উল্লেখ রয়েছে-

 فاذا فرغتَ مِنَ الصلوة فانْصَبْ اتعب فى الدّعاءِ-

অর্থাৎ- যখন আপনি নামায হতে অবসর হবেন, তখন দো’আয় মনোনিবেশ করুন। নামাযের পর দো’আ করার বা মুনাজাতের নির্দেশ স্বয়ং মহান আল্লাহ্ প্রিয় নবীর মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়েছেন।

 পবিত্র হাদীসে পাকে প্রিয় নবী হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن مالك بن يسار قال قال رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم اذا سألتمُ الله فاسئلُوه بِبُطُونَ اكفكم ولاتسالوه بظهورها فاذا فرَعْتُمْ فامسحُوْا بها وجوهَكُمْ- (رواه ابو داؤود- مشكوة صفه ১৯৬)

অর্থাৎ- প্রিয় নবীর সাহাবী হযরত মালিক ইবনে ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন 

‘‘যখন তোমরা আল্লাহর দরবারে দো’আ করবে তখন তোমাদের হাতের তালু উপরের দিকে করে দো’আ করবে, হাতের পৃষ্ঠ দিয়ে নয়। আর মুনাজাত থেকে অবসর হয়ে উভয় হাতের তালু তোমাদের চেহারায় মসেহ করবে

। [আবু দাঊদ ও মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ১৯৬] 

 

ফরয নামাযের জমাতের পর মুনাজাত স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বরকতময় আমল হতে প্রমাণিত। সুতরাং ফরয নামাযের জামাতের পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদের সাথে নিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও বরকতময়। যেমন- عن الاسود العامرى عن ابيه قال صليتُ مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلمّا سَلّمَ اَنْصَرفَ ورَفَعَ يَدَيه ودَعا-

অর্থাৎ প্রখ্যাত হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আসওয়াদ আমেরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে ফজরের নামায পড়েছি। যখন তিনি ফজরের নামাযের সালাম ফিরালেন তখন মুসল্লিগণের দিকে ফিরে বসলেন এবং উভয় হাত উপরের দিকে উঠিয়ে মুনাজাত করলেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা] ফুকাহায়ে কেরাম নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ও উত্তম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যেমন- ‘নুরুল ঈজাহ্’ কিতাবে ইমামত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে- 

ثُمَّ يدعُوْن لانفسهِمْ وللمسلمين رافعى اَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَمسِحُوْن بها وجُوهَهُمْ فىِ اخِره-

অর্থাৎ- নামাযের জমাত শেষে হাত তুলে নিজেদের জন্য এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য দো’আ করবে। অতঃপর উভয় হাত দ্বারা নিজেদের চেহেরা মসেহ করবে। নামায শেষে মুনাজাত করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আমল হতে প্রমাণিত। সুতরাং ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও নফল তথা প্রত্যেক নামাযের পর উভয় হাত তোলে দো’আ মুনাজাত/ ফরিয়াদ করা যুক্তিযুক্ত, ক্বোরআন-হাদীস তথা শরীয়ত সম্মত। যা অতি বরকতময়, উত্তম ও মুস্তাহাব আমল। এটাকে না-জায়েয ও বিদআত বলা গোমরাহী ও মূর্খতা। [তাফসীরে জালালাইন শরীফ, সুনানে আবু দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ও নুরুল ঈজাহ্ ইত্যাদি]


 

নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 

আরও পড়ুন ..................... 

প্রশ্নোত্তরস্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর স্বামীর ঘরে থাকা যাবে কিনা?
প্রশ্নোত্তরমৃত ব্যক্তির কবরে কলেমা বা দো যা বরকতের আহাদনামা দেয়া যাবে কিনা?
প্রশ্নোত্তরইল্লাল্লাহ্ জিকির করা যাবে কিনা?

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad