ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর

  

প্রশ্নোত্তরমোবাইলে পবিত্র ক্বোরআন শরীফহাদীস শরীফ থাকলে সাথে নিয়ে পায়খানা - প্রস্রাবখানায় যাওয়া যাবে কিনা?



প্রশ্নবর্তমানে অনেক ধরনের মোবাইল সেট রয়েছেকোন কোন মোবাইলে কিছু সফটওয়্যার রাখা হয়, যাতে রয়েছেপবিত্র ক্বোরআন শরীফবোখারী শরীফতিরমিযী শরীফ ইত্যাদি।আবার এসব মোবাইলে রাখা হয় কিছু অশ্লীল খারাপ ছবিও।  সব মোবাইল ব্যবহার করা এবং সাথে নিয়ে পায়খানাপ্রস্রাবখানায় যাওয়া শরীয়ত সম্মত হবে কি নাজানালে উপকৃত হব।

 

উত্তরপ্রযুক্তির উন্নত উৎকর্ষের এই যুগে আপডেট মোবাইল হেন্ডসেট ফোন যোগাযোগের জন্য একটি জনপ্রিয়  নিত্য 

প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।

এসব প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের আবিস্কার ভাল কাজে ব্যবহার ভাল, মন্দ কাজে ব্যবহার করা গুনাহ্, নিজের প্রয়োজনে এবং সময় সুযোগমত দেখা ও পড়ার জন্য বা তেলাওয়াতের জন্য ক্বোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ সহ বিভিন্ন ইসলামিক অ্যাপস, ক্বোরআন তেলাওয়াত, ক্বোরআনের বিভিন্ন সূরা, আয়াত, হামদ, না’ত ও মানকাবাত ইত্যাদি ডাউনলোড করে রাখা নিঃসন্দেহে ভাল। ক্বোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও অন্যান্য কিতাব সমূহ আকারে বড় এবং সব সময় বহন করা সহজ নয়। মোবাইল ফোন যেহেতু আকারে ছোট এবং তা পকেটে/ হাতে করে বহন করা যায় ও সহজসাধ্য বিধায় এসব মোবাইলে নিয়ে ইসলামীক অ্যাপস থাকা সত্ত্বেও টয়লেট/ওয়াশরুম ইত্যাদিতে প্রবেশ করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে প্রস্রাবখানা,

 টয়লেটে ও ওয়াশরুমে এসব অ্যাপস হতে কোন ক্বোরআন-হাদীস দেখবে না এবং শুনবে না এতে নিঃসন্দেহে বেহুরমতি ও গুনাহ হবে। মোবাইল নেটওয়ার্ক যেহেতু সর্বত্র পৌঁছে যায়- তাই মোবাইলের রিংটোন-এ পবিত্র ক্বোরআনের আয়াত, হামদ, না’ত হাদীসের অংশ বিশেষ ইত্যাদি রিংটোন হিসেবে ব্যবহার না করা চায়। কেননা, 

তা (রিংটোন) পায়খানা-প্রশ্রাবখানায় যদি বেজে উঠে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ক্বোরআন মজীদ ও হাদীস শরীফের আদবের পরিপন্থি হবে। আর ক্বোরআন-সুন্নাহ্, হামদ, না’ত ইত্যাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। ইসলামী শরীয়তের এটাই বিধান। তবে মোবাইলে খারাপ কোন ভিডিও অ্যাপস রাখা

 এবং দেখা দুটো খারাপ ও অন্যায় এবং গুনাহের কাজ। মহান আল্লাহ্ বান্দার প্রকাশ্য ও গোপন কর্মের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত।

 উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বেশির ভাগ সময় মোবাইল ফোন, ফেইসবুক ও অনলাইনে দিবারাত অতিবাহিত করছে যা লেখা-পড়া, প্রকৃত জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জনে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 সুতরাং এ বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। নতুবা অচিরেই শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে।

 আরও পড়ূন 

মহানবী (ﷺ) এর হাদিস শরীফ

প্রশ্নোত্তরআপন-ভাতিজা  ভাগিনার বউ এবং আপন চাচী/মামীতারা কি মোহরেম না কি গায়রে মোহরেম?

প্রশ্ন: আপন-ভাতিজা ও ভাগিনার বউ এবং আপন চাচী/মামী- তারা কি মোহরেম না কি গায়রে মোহরেম?


উত্তর: পবিত্র ক্বোরআনে বর্ণিত, মুহরমাত তথা যাদেরকে বিবাহ্ করা পুরুষদের জন্য হারাম তারা হলেন- আপন মা, আপন খালা, আপন ফুফু, আপন শ্বাশুড়ী, দুধু মা, আপন মেয়ে, আপন ভাতিজি, আপন বোনের মেয়ে, ছেলের স্ত্রী, সৎমেয়ে, আপন দাদী, আপন নানী ও দুধু বোন ইত্যাদি। উপরোল্লেখিত নারীগণ ব্যতীত আপন মেয়ের কন্যা (নাতনী), নাতীনের মেয়ে এভাবে নীচের দিকে সবাই, আপন ভাতিজি ও ভাগিনীর মেয়ে এভাবে ভাতিজি ও ভাগিনীর মেয়ের মেয়ে যত নীচের দিকে যায়, সৎমেয়ের মেয়ে যত নীচের দিকে যায় এবং দুধু বোনের মেয়ে ও মেয়ের মেয়ে যত নীচের দিকে যায় তাদেরকে বিবাহ করা হারাম।


 তবে আপন ভাতিজা ও ভাগিনার বউ এবং আপন চাচী ও মামী মুহরামাত (যাদেরকে বিবাহ্ করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণে হারাম) এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। 

[তাফসীর সহ সূরা নিসা: আয়াত নং ২৩ ও শরহুল বেকায়া নেকাহ (বিবাহ্) অধ্যায়]

 আরও পড়ূন 

প্রশ্নোত্তরএকই ব্যক্তির একাধিকবার জানাযার নামায পড়া।

প্রশ্ন: কিছু দিন আগে আমার এক ফুফাত ভাই মারা যায়। ঢাকায় যেহেতু আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন ও শহরের অনেক বন্ধু ও সহকর্মী আছে তাই এখানে তার নামাযে জানাযা হয়। অবশ্য তার একমাত্র ছেলে নামাযে জানাযা অংশ নেয় নাই। তাকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় গ্রামে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।


 যাতে ছেলে অংশগ্রহণ করে। গ্রামে ২/১জন মৌলানা নামাযে জানাযায় আপত্তি তোলে- যে নামাযে জানাযা পড়ার নিয়ম শরীয়তে নেই। অথচ আমরা দেখি একই ব্যক্তির একাধিকবার জানাযার নামায পড়া হয়। সঠিক মাসয়ালা জানালে অনেকেই উপকৃত হবে।


উত্তর: নামাযে জানাযা মুমিন মৃত ব্যক্তির হক্ব ও অধিকার। এটা আদায় করা ফরযে কেফায়া অর্থাৎ- যে কেউ আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যায়। নতুবা যারা মৃত্যুর সংবাদ শুনেছে কিন্তু কেউ জানাযার নামাযে উপস্থিত হয়নি তখন সবাই গুনাহগার হবে। মৃত ব্যক্তির অলি বা অভিভাবক এক বা একাধিক হলে একজনের উপস্থিতি বা তার অনুমতি সাপেক্ষে মহল্লার ইমাম বা অন্য কেউ নামাযে জানাযা পরিচালনা করলে জানাযার ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যায়। অন্য কারো জন্য ২য় বার নামাযে জানাযা পড়ার বিধান নেই। যেমন ইলমে ফিক্বহের বিশ্ববিখ্যাত কিতাব হেদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে-


ان صلّى الولى لم يجز لاحد يصلى بعد لان الفرض يتادى بالاول والنفل بهاعير مشروع-


অর্থাৎ- যদি (মৃত ব্যক্তির) অলি বা নিকটতম অভিভাবক নামাযে জানাযা আদায় করে তবে তার পরে অন্য কারো জন্য ২য় বার নামাযে জানাযা পড়া বৈধ হবে না।


 কেননা প্রথম জানাযার নামাযের মাধ্যমে ফরয আদায় হয়ে গেছে। তারপর পড়া হলে নফল হবে এবং জানাযার নামাযে নফল শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নাই। ফতোয়ায়ে আলমগীরি ও দুররুল মুখতার ফতোয়া গ্রন্থের বরাতে বাহারে শরীয়তে উল্লেখ আছে-


اگر ايك ولى نے نماز پڑهاوى تو دوسرے اولياء اعاده نهيں كرسكتے-

অর্থাৎ যদি একজন নিকটতম অলি বা অভিভাবক জানাযার নামায পড়িয়ে দেয় তবে অন্য অলি বা অভিভাবকরা উক্ত নামাযে জানাযা পুনরায় পড়তে পারবে না।

 

 আর মৃত ব্যক্তির অলি বা অভিভাবক ছাড়া কেউ জানাযার নামায পড়লে এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তি অভিভাবকের চেয়ে ইমামতির অধিক হক্বদার না হলে যেমন: রাষ্ট্রপতি, বাদশাহ বা তার প্রতিনিধি অথবা রাষ্ট্রীয় কাজী আর অভিভাবক তাকে অনুমতি প্রদান না করলে এবং উক্ত নামাযে জানাযার অভিভাবক শামিল না হলে তবে অভিভাবকের জন্য পুনরায় নামাযে জানাযা পড়া বৈধ। যদি নিকটতম অভিভাবক ইচ্ছা করে।

 তবে ইদানিং আমাদের দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একাধিকবার নামাযে জানাযার (শহরে একবার, ২য় বার গ্রামে) যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা লোক দেখানো ও খেয়াল খুশিমত অর্থাৎ শরীয়তের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে- যার যেমন ইচ্ছা তেমন করার নামান্তর। তবে মৃত ব্যক্তির জন্য দো-মুনাজাত , তাসবিহ-তাহলীল, দান-সদকা, ফাতেহাখানি, খতমে ক্বোরআন, খতমে গাউসিয়া ইত্যাদি ইসালে সাওয়াবের আয়োজন যত বেশি করা হবে জিবীত ও মৃত সকলের তত বেশি উপকৃত হবে।

উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির নিকটতম অলি/অভিভাবক হল স্বীয় পিতা ও ছেলে। তারা না থাকলে অলি হবে চাচা ও ভাই। মূলত মাসয়ালা হল মৃত ব্যক্তির প্রকৃত অলি/অভিভাবক নামাযে জানাযা আদায় করলে অথবা নামাযে জানাযা আদায় করার অনুমতি দান করলে ২য় বার নামাযে জানাযা পড়া শরীয়ত সম্মত নয়। 

[হেদায়া ও ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া- নামাযে জানাযা অধ্যায়]

 আরও পড়ূন 

নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 

  • 10 Minute Madrasah ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন
  • 10 Minute Madrasah ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
  • 10 Minute Madrasah ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন
  • গুগল নিউজে 10 Minute Madrasah সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
  • 10 Minute Madrasah সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে
  • প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.10minutesmadrasah.com সাইট।
  •  

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Be alert before spamming comments.

    নবীনতর পূর্বতন

    Sponsored

    Responsive Ad