মহান আল্লাহ তা' আলার পরিচয় ( ইসলামী জীবন )


মহান আল্লাহ তা' আলার পরিচয় ( ইসলামী জীবন )


মহান আল্লাহ তা' আলার পরিচয়



আল্লাহ তাআ'লার প্রতি এরূপ ঈমান আনয়ন করবে যে, তিনি চির বিদ্যমান, তিনি একক, তিনি অনন্য নিরপেক্ষ, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন । সকলেই তার মুখাপেক্ষী । তিনি কারো হতে জন্মগ্রহণ করেন নি, এবং তিনি কাউকেও জন্ম দান করেন নি । কেউ তাঁর সমকক্ষ ও শরীক নেই । তিনি অনাদি, অনন্ত, তিনি চিরকাল আছেন ও চিরকাল থাকবেন । তিনি স্থান ও কালের পন্ডিভুক্ত নন ৷ তিনি সর্বশক্তিমান ও পরম পরাক্রমশালী, তিনি দয়াশীল ও দয়াময় ৷ তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন । জগতের সবকিছুই তাঁর ইচ্ছায় হচ্ছে । তিনি সবকিছুই জানেন দেখেন ও শুনেন । ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর পরমাণু, গুপ্ত হতে গুপ্ততর এবং ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর সব কিছুই তাঁর দেখা, শুনা ও জানার বাইরে নয় । পবিত্র কুরআন তাঁর বাণী বা কালাম । কিস্তু এ সকল গুণ প্রকাশের জন্য তিনি আমাদের ন্যায় দেহ বা কোন ইন্দ্রিয়ের মুখাপেক্ষী নন ৷ তিনি এ সকল গুণ কিভাবে প্রকাশ করেন তা তিনিই জানেন ৷ তা আমাদের জ্ঞানসীমার বাইরে ৷ তিনি সমস্ত সৎ গুণাবলীতে গুণাম্বিত এবং যাবতীয় অসৎ গুণাবলী হতে সম্পূর্ণ পবিত্র৷


 পবিত্র কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেন তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। তিনি সমস্ত জগতকে, মানুষ ও মানুষের কার্য্যাবলীকে, বস্তু ও বস্তুর গুণাবলীকে সৃষ্টি করেছেন । আমরা তার সৃষ্ট বান্দা । সুতরাং আমাদের উপর তার যথেচ্ছা হুকূম জারি করা অধিকার রয়েছে এবং এ অধিকার বলেই তিনি আমাদের জীবন যাপনের জন্য (ব্যক্তিগত জীবন হোক, আর সামাজিক জীবন হোক) যাবতীয় উপকরণ অবশ্যই নির্ধারণ করে দিয়েছেন ৷ আমরা তার এ সকল নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করে চলতে বাধ্য ৷ তিনি যা করেন সবই ন্যায়, সবই সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য করেন । অন্যায় অবিচার তখনই হয় যখন কেউ অন্যের রাজ্যে, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, আর তিনি যা করেন তার নিজের রাজ্যে ও নিজের অধিকারেই করেন । তিনি তার সৃষ্ট বস্তু বা যাকে যেরূপ সৃষ্টি করেছেন, তাই তার উপযোগী, তাই তার জন্য মঙ্গল । তিনি যাকে যা দান করেন, অনুগ্রহ করেই করেন,সব কিছুই তাঁর পক্ষে সম্ভব৷


 মহান আল্লাহ তাআ’লার যথাযথ পরিচয় বর্ণনা করা পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে আদৌ সম্ভবপর নয় । তিনি মানুষের চিন্তা ও ধারণার ঊর্ধ্বে । আমাদের সীমিত জ্ঞান দ্বারা কখনো তার অসীম জ্ঞানকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয় । মানুষ কেবলমাত্র তাঁর সৃষ্ট জীব । এ সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই মানুষের অপারগতার কথা বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন- হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ! আপনি লোকদেরকে বলে দিন, আল্লাহর মহীমা কীর্তন সূচক (প্রশংসা সূচক) বাণীসমূহ প্রকাশ করতে যদি সমুদ্রকে কালিতে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়, তবে সমুদ্র শূন্য হয়ে যাবে কিন্তু সে বাণীসমূহের ব্যাখ্যা শেষ করা যাবে না । আর শুধু এ সমুদ্র নয়, অনুরূপ আরো বহু সমুদ্র অন্তর্ভুক্ত করলেও অবস্থা একই দাড়াবে। (সূরা আল-কাহাফ, আয়াত-১০৯)


 (আল্লাহ) শব্দটি একটি নাম বাচক শব্দ । এ শব্দের কোন প্রতিশব্দ নেই ইহা লিঙ্গ ও বচন ভেদে সম্পূর্ণ মুক্ত ৷ দুনিয়ার কোন ভাষায় বা শব্দে এর অনুবাদ হতে পারে না । কেবলমাত্র সৃষ্টি জগতের অধিশ্বর সু মহান সত্তা তাঁর পরিচিতির জন্যই আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন । আল্লাহ বলতে একমাত্র অদ্বিতীয় আল্লাহ্কেই বুঝায় ৷ এজন্য এ নামকে ইসমে আযম বলা হয়।


ইসলামী দোয়া পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 


 আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীর সাথে তুলনা করা যায় এমন কোন কিছুর অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। পবিত্র কােরআনে আল্লাহর নিরানব্বইটি গুণবাচক নাম পাওয়া যায় । নিম্নে আল্লাহ তা’য়ালার কতিপয় গুণগত নামের পরিচয়ের বর্ণনা দেয়া হলো-


 আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় ৷ তাঁর কোন শরীক নেই । তার সাথে তুলনা করা যায় এমন কিছু পৃথিবীতে নেই । এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- আসমান যমীনে যদি এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ বা উপাস্য থাকত, তাহলে উভয় স্থানে অবশ্যই বিশৃঙ্খলা দেখা দিত ।


 মহান আল্লাহ তাআ’লা হচ্ছেন সর্ব শক্তির আঁধার । চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, পাহাড় পর্বত, সাগর মহাসাগর সব কিছুই তার কুদরতি হাতের মুঠোয় বন্ধী, সকল কিছু র্তারই নিয়ন্ত্রণে । তিনিই সব কিছুর পরিচালক, নিয়ন্ত্রক ও রক্ষাকর্তা । তারই নির্দেশে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাআ’লা সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান ৷ আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষণাবেক্ষণকারী । তিনি মানব জাতির কল্যাণার্থে ভূমণ্ডল, নভােমণ্ডল ও এর মাঝখানে যা কিছু রয়েছে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন । এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- তিনি সেই (আল্লাহ) সত্তা যিনি আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানের সকল কিছুর সৃষ্টিকারী ।




 আল্লাহ আলিমুল গায়েব ৷ তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সকল কিছু জানেন । তিনি সর্বত্র বিরাজমান । তিনি প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সকল কিছু দেখেন ও খবর রাখেন ৷ এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- তিনি (আল্লাহ) প্রত্যেক দৃশ্য অদৃশ্য ও উপস্থিত অনুপস্থিত সকল বিষয়ে পুরোপুরি পরিজ্ঞাত ৷


 আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান । তিনি চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব । এ বিশ্বে যা কিছু আছে সব কিছুই একদিন ধ্বংস প্রাপ্ত হবে । কেবলমাত্র তিনিই অক্ষয় থাকবেন । এ সম্পর্কে আল্লাহপাক এরশাদ করেন- যে দিন পৃথিবীর সকল কিছু (জ্বিন মানবসহ) ধ্বংস হয়ে যাবে, সেদিনও অক্ষয় থাকবেন একমাত্র মহান আল্লাহর একক সত্তা ৷


 আল্লাহ বিশ্বের সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক । চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, সকল তাঁরই সৃষ্টি । তাঁর নির্দেশেই তারা নিজ নিজ কক্ষ পথে পরিচালিত হচ্ছে । এ সম্পর্কে আল্লাহপাক এরশাদ করেন- প্রত্যেক গ্রহ, নক্ষত্র, গ্রহাণুপুঞ্জ আল্লাহর নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত পথে পরিভ্রমণ করে ৷ (সূরাঃ ইয়াসিন)


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই সকল প্রাণীকূলের রিযিক দাতা । কোন সৃষ্টিকেই তিনি রিযিক থেকে বঞ্চিত করেন না । প্রত্যেক প্রাণীকেই তিনি রিযিক দান করেন এবং প্রতিপালন করেন । এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অতি মেহেরবান । বিশ্বের সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র মহান আল্লাহ তাআ’লা ৷ তাঁর সমতুল্য ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই । আসমান ও যমীনে যা কিছু বিরাজমান, সবই তাঁর ইচ্ছা শক্তির বহিঃপ্রকাশ মাত্র । আর এ জন্যেই বলা হয় মানুষের কল্যাণের জন্য আল্লাহর প্রদত্ত জীবন বিধানই সর্বোত্তম বিধান ৷

 এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বিধান দেয়ার অধিকার নেই । (সূরাঃ ইউসুফ, আয়াতঃ ৪০)


উপরোক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ এমন এক সত্তা যার অসংখ্য গুণাবলী রয়েছে ৷ তার একক সত্তা ও বিভিন্ন গুণাবলীর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করাই মুমিন-মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য ৷


মহানবী (দঃ) এর জীবনি পড়তে ভিজিট করুন। 

১।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


২।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


৩।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


৪।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ৪


৫।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad