মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব ৫/শেষ পর্ব

 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব ৫/শেষ পর্ব 




প্রিয় পাঠক বন্ধু ও প্রিয় ইসলামী ভাই ও বোনেরা , আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, শুরু করছি পবিত্র মাহে রবিউল আওয়াল উপলক্ষে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনা "মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর জীবনী" আজকে শেষ  পর্বে আপনারা জানতে পারবেন হুযুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযুর (আলাইহিস সালাস) এর হাবশায় হিজরত ও মেরাজ। 

তো চলুন শুরু করা যাক -

পর্ব ৫

হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামএর হাবশায় হিজরত

হাবশার বাদশাহের লকব ছিল নজজাশী। তার ন্যায় পরায়নতা ও ন্যায় বিচারের জন্য আরবে খুবই খ্যাতনামা ছিল। প্রথমে (নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ম মাসে) এগার জন পুরুষ ও চারজন মহিলা হিজরত করেন। ঘটনাক্রমে তাঁরা যখন বন্দরে উপস্থিত হন, তখন দু’টি বাণিজ্যিক জাহাজ হাবশা যাচ্ছিল। জাহাজের আরোহীগণ তাঁদেরকেও উঠায়ে নেয়। এদিকে কুরাইশগণ ওনাদের হিজরতের খবর পেয়ে বন্দরের দিকে দৌড়ে এসেছিল। কিন্তু ওরা পৌছার আগেই জাহাজ রওয়ানা হয়ে গিয়েছিল। হাবশাতে মুসলমানগণ নিরাপদে ও শান্তিতে জীবন-যাপন করছিলেন। কুরাইশ এ খবর পেয়ে খুবই ঈর্ষান্বিত হলো। শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নিল যে নজ্জাশীর কাছে একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করবে, সে ওকে গিয়ে বলবে, মুসলমানদেরকে যেন ওর দেশ থেকে বের করে দেয়। আবদুল্লাহ বিন আবি বরিআ ও আমর বিন আসকে এ কাজের জন্য মনোনীত করে। এরা হাবশায় গিয়ে প্রথমে রাজ দরবারের পাদ্রীদের সাথে সাক্ষাত করে এবং ওদেরকে মূল্যবান উপহার সামগ্রী দিয়ে বললো আমাদের শহরের কয়েকজন বিপথগামী ব্যক্তি একটি নতুন ধর্ম আবিস্কার করেছে, যা খ্রীষ্ট ধর্ম ও মূর্তিপূজা বিরোধী এরা পালিয়ে হাবশায় এসে গেছে। আগামীকাল আমরা বাদশাহের কাছে আবেদন করবো যেন ওদেরকে তাঁর দেশ থেকে বের করে দেয়। আপনার এ ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করবেন। পর দিন এ প্রতিনিধিদল বাদশাহের দরবারে গিয়ে আবেদন করলো। বাদশাহ নজ্জাশী মুসলমানদেরকে ডেকে পাঠালো। যখন ওনারা আসলেন, জিজ্ঞাসা করলো তোমরা এমন কোন ধর্মটা আবিস্কার করেছ, যা খ্রীষ্টান ধর্ম ও মূর্তি পূজা উভয়ের বিপরীত। মুসলমানদের পক্ষ থেকে হযরত জাফর (রাদি আল্লাহ আনহু) দাঁড়িয়ে বললেনঃ “মাননীয় বাদশাহ মহোদয়, আমরা বর্বর জাতি ছিলাম” মূর্তি পূজা করতাম, মৃত পশু ভক্ষণ করতাম, মন্দ কাজ করতাম, প্রতিবেশীদেরকে জ্বালাতন করতাম, একভাই অপর ভাই এর উপর জুলুম করতাম, দুর্বলদের উপর অত্যাচার করতাম। অবশেষে আমাদের মধ্যে এমন এক মহান ব্যক্তি আগমণ করেন, যিনি আমদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন, মূর্তিপূজা থেকে বারণ করেন। যার ফলে আমরা খুন খারাবী থেকে বিরত থাকি, এয়াতিমের হক যেন আত্মসাৎ না করি, যেন সদা সত্য কথা বলি, প্রতিবেশীদের সাহায্য করি, পূত:পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করি, কারো প্রতি যেন অপবাদ লেপণ না করি, নামায পড়ি, রোযা রাখি, যাকাত প্রদান করি। আমাদের জাতি আমাদের জানের দুশমন হয়ে গেল। নজ্জাশী বললো, 'যে আল্লাহর কালাম তোমাদের নবীর উপর অবতীর্ণ  হয়েছে তা থেকে কিছু পড়ে শুনাও।" হযরত জাফর (রাদি আল্লাহ তাআলা আনহু) যখন সূরা মরিয়মের কয়েকটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন, তখন নজ্জাশী কেঁদে দিল এবং কম্পমান স্বরে বলতে  লাগলো ‘খোদার কসম, এ কালাম ও ইনজিল, একই নূর থেকে উৎপত্তি অতঃপর কুরাইশের প্রতিনিধি দলকে বললো তোমরা ফিরে যাও। মজলুমদেরকে তোমাদের হওলা করবো না। পরদিন আমর বিন আস পুনরায় বাদশাহের দরবারে প্রবেশ করলো এবং বাদশাহ আপনি কি জানেন, এরা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে  কি ধারণা পোষণ করে? বাদশাদ নাজ্জাশী পুনরায় মুসলমানদেরকে ডেকে আনলো এবং সেই প্রশ্নের উত্তর তলব করলো। হযরত জাফর (রাদি আল্লাহ আনহু) বললেন, আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহ তায়ালা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর বান্দা ও নবী। বাদশাহ নাজ্জাশী মাটি থেকে একটি খড়কুটা উঠায়ে বললো, খোদার কসম, তুমি যা কিছু বলেছ, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর থেকে এক কণা পরিমাণ ও এদিক সেদিক নয়। শেষ পর্যন্ত কুরাইশ প্রতিনিধি বিফল হয়ে ফিরে গেল। এ ঘটনার কিছু দিন পর এমন এক গুজব ছড়িয়ে পড়লো যে সমস্ত কুরাইশগণ ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছে। এ গুজব শুনে প্রায় সাহাবা মক্কা শরীফের পানে ধাবিত হলেন। কিন্তু শহরের কাছে এসে জানতে পারলেন যে এটা একটা নিছক গুজব। তখন তাঁরা  ফিরে না গিয়ে, যে কোন উপায়ে মক্কায় ঢুকে গেলেন। যে সব লোক হাবশা থেকে মক্কায় ফিরে এসেছিলেন, কুরাইশগণ ওনাদেরকে অত্যাচারের লক্ষ্যবস্তু ঠিক করেছিল এবং ওনাদের প্রতি এমনভাবে অত্যাচার করে, যার ফলে ওনারা পুনরায় হিজরত করতে বাধ্য হন। কিন্তু তখন হিজরত করা আগের মত তত সহজ ছিলনা কুরাইশেরা প্রায় সময় ওনাদের পিছনে পাহারা দিত। এরপরও প্রায় শ' খানেক সাহাবা মক্কা থেকে হাবশা চলে যেতে সক্ষম হন।

ফজিলত পূর্ণ দরুদ , "দুরুদে তাজ" পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামএর মেরাজ

হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) একরাত কাবা শরীফের দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করছিলেন। এমন সময় জিব্রাইল  (আলাইহিস সালাম) এসে হুযুর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে জাগালেন এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মেরাজের দাওয়াতের সুসংবাদ শুনালেন। যমযম কূপের পাশে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর বক্ষ মুবারক কর্তন করা হলো হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং ফরমান; একটি স্বর্ণের থালা আনা হলো, যার মধ্যে আমার কলিজা ধৌত করা হলো এবং এরপর আমার বক্ষ ঠিক করে দেয়া হলো।’ হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হেরম শরীফের বাইরে তশরীফ আনলেন। সেখানে যাত্রার জন্য একটি প্রাণী মওজুদ ছিল। এর নাম ছিল বুরাক। এটা এত দ্রুতগামী ছিল যে মানুষের দৃষ্টি সীমায় ওর এক কদম পতিত হতো। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বুরাকের উপর আরোহণ করে বায়তুল মুকাদ্দস আসলেন, যেখানে সমস্ত নবীগণ (যারা তাঁর আগে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেন) তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওনারা সবাই হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর ইমামতিতে নামায আদায় করলেন। এরপর বুরাক তাঁকে নিয়ে উদ্ধাকাশে রওয়ানা দিল। তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাত আসমান পরিভ্রমণ করালো, সেখানে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তাআলার অগণিত নিদর্শনসমূহ অবলোকন করলেন। বিভিন্ন আসমানে নবীগণের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আলাইহিস সালাম) এর সাথে সাক্ষাত হলো। তিনি (আলাইহি সালাম) তাঁকে অভ্যর্থনা করলেন এবং বললেন, “খোশ আমদেদ হে পূণ্যবান নবী, মরহাবা! হে মনমুগ্ধকর বংশধর।

এরপর হুজুর (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এমন এক জায়গায় পৌছলেন যার নাম 'সিদরাতুল মুনতাহা’ যেটা আল্লাহ তাআলার নূরের তজল্লীর স্থান। হুযু়র (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আর একটু সামনে এগিয়ে গেলেন এবং আল্লাহ তাআলার দীদার লাভ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য এবং তাঁর প্রিয় উম্মতের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের তোহফা এবং অগণিত  খোদায়ী পুরস্কার প্রদান করলেন।

সকালে যখন হুযুর (সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মক্কায় লোকদেরকে মেরাজের এ ঘটনা শুনালেন, তখন কাফিরেরা এ কথা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগলো। হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাদি আল্লাহ তাআলা আনহ) এ কথা শুনে কাফিরদের বললেন, ‘হুযুর যদি এ কথা বলে থাকে, তাহলে নিশ্চয় সত্যই বলেছেন। এতে তোমাদের আশ্চর্য হবার কি আছে? হযরত আকরমা (রাদি আল্লাহ তাআলা আনছ) ফরমান, হযরত ইবনে আব্বাস (রাদি আল্লাহ তাআলা আনহু) থেকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মেরাজের রাতে হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) স্বীয় সৃষ্টি কর্তাকে নিজ চোখে দেখেছিলেন? তিনি ফরমালেন ‘হ্যাঁ’, অর্থাৎ হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজের চোখে স্বীয় সৃষ্টিকর্তাকে দেখেছেন। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)মদীনায় হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যদিওবা তাঁর কিছু সাহাবাকে হাবশা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তবুও কাফিরেরা জুলুম অত্যাচার থেকে বিরত হয়নি। যতই ইসলামের আলো বিস্তার লাভ করছিল, ততই কাফিরদের জুলুম অত্যাচার বৃদ্ধি  পাচ্ছিল। কিছু মুসলমান হুযুরের অনুমতি নিয়ে হাবশা চলে গিয়েছিলেন। মুসলমানদেরকে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করার জন্য হুযুর (সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) অনুমতি দিলেন। এরপর মুসলমানগণ ক্রমান্বয়ে আপন প্ৰিয় ভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় পাড়ি জমালেন। সব মুসলমান চলে যাবার পর হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম  ) হযরত আবু বকরকে সাথে নিয়ে মদীনায় চলে গেলেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ দঃ এর জীবনাদর্শ আমাদের জীবনে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন আমিন। 


পূর্ববর্তী পর্ব সমূহ পড়ূন-





৫।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad