ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর

 

 ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর

ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর


প্রশ্নোত্তরস্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর স্বামীর ঘরে থাকা যাবে কিনা?

প্রশ্ন: স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরে স্বামীর ঘরে থাকতে পারবে কিনা? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তরস্বীয় স্ত্রীকে স্বামী তিন তালাক প্রদান করে বিবাহের সম্পর্ক ছিন্ন করলে স্ত্রী ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক স্বামীর ঘরে স্বামী হতে আলাদা হয়ে ইদ্দত পালন করা পর্যন্ত অবস্থান করবে।

ইদ্দত চলাকালীন সময়ে স্ত্রীর যাবতীয় ভরন-পোষণ স্বামী বা স্বামীর অভিভাককে বহন করতে হবে। তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীর ইদ্দত হল গর্ভীতা হলে গর্ভের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। আর গর্ভবতী না হলে তিন হায়েয বা তালাকের পর তিন বার ঋতুস্রাব সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত। আর স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে ১/২ তালাক প্রদান করলে তাও উপরোক্ত নিয়মে স্ত্রী স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করবে। উক্ত সময়ের মধ্যে স্বামী স্বীয় স্ত্রীর নিকট প্রত্যাবর্তন করলে পূর্বের নিকাহ্ ঠিক থাকবে।


পুনরায় আকদের প্রয়োজন হবে না। ১/২ তালাক প্রদানের পর আর উপরোক্ত ইদ্দতের মধ্যে স্বীয় স্ত্রীর নিকট স্বামী রজয়ত বা প্রত্যাবর্তন না করলে তালাকে বায়েনা হয়ে যাবে। তখন উক্ত স্বামী স্ত্রীর ইদ্দত চলে যাওয়ার পর ঘর সংসার করতে ইচ্ছা করলে নূতনভাবে আকদের মাধ্যমে ঘর/সংসার করতে পারবে।


আর স্ত্রী ইচ্ছা করলে তখন অন্য নূতন স্বামীর সাথে ও আকদের মাধ্যমে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। [শরহে বেকায়া ও হেদায়া তালাক অধ্যায়]



প্রশ্নোত্তরমৃত ব্যক্তির কবরে কলেমা বা দো যা বরকতের আহাদনামা দেয়া যাবে কিনা?


প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় বহুকাল হতে মৃত ব্যক্তির কবরে কলেমা বা দো’আ যা বরকতের জন্য দেয়া হয় সেটাকে আহাদ নামা বলে আমরা জানি। কিছু দিন আগে একজন মাওলানা বলল এটা বিদআত, তার কোন ভিত্তি নেই। প্রকৃত অর্থে আহাদ নামার কোন ফজিলত আছে কিনা?

 মৃত ব্যক্তির ‘কপালে বা কাফনে বিস্মিল্লাহ্ অথবা দো’আ-দরূদ লেখার ফজিলতসহ বিস্তারিত জানালে ধন্য হব।

উত্তরমৃত ব্যক্তির কাফনে কিংবা পৃথক কাপড়ে কলমায়ে তৈয়্যবা অথবা পৃথক একটি কাপড়ে লিখে আহাদনামা (দোআটিকবরের ভিতর দেয়া হয়। যাতে তার বরকতে কবরবাসী আজাব হতে রক্ষা পায়।

এবং মুনকার নাকিরের সাওয়ালের জবাব তার জন্য সহজ হয় এটা বৈধ ও বরকতমন্ডিত। এটাকে বিদআত বা ভিত্তিহীন বলা গোমরাহী ও অজ্ঞতা বরং এটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা এবং নির্ভরযোগ্য দলিল সমর্থিত।

 

 যেমন ইমাম তিরমিযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘নাওয়াদেরুল উসূলে’ বর্ণনা করেন-

مَنْ كَتَبَ هَذِهِ الدُّعَاءِ وَجَعَلَهُ بَيْنَ صَدْرِ المَيْت وكَفْنِهِ فى رُقْعةٍ لم يَنَلَهُ عَذابُ القبر ولايرى منكرا ونكيرا وهو هذا-

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি এ দো’আটি কোন কাগজের টুকরায় লিখে কবরে মৃতের বক্ষের উপর কাফনের নিচে রাখবে তাকে কবরের আযাব পাবে না এবং সে মুনকার-নাকিরকে দেখবে না। দো’আটি নি¤œরূপ-

لَا اِلَهَ الَّا الله أكبر لااله الّا الله وحدهُ لا شريك لَهُ لاالَهَ اِلَّا الله لهُ الملك ولَهُ الحمد لااله اِلَّا الله ولاحولَ ولَا قوَّةَ اِلَّا بِاللهِ العَلِىّ العظيم-

ইমাম তিরমিজি সৈয়্যদুনা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর সূত্রে বর্ণনা করেন- হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 

 ‘‘যে ব্যক্তি নামাযের পর  দোআটি পাঠ করে তখন ফেরেশতারা উহা লিখে মহর অংকিত করে কিয়ামতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখেন। আল্লাহ্ তাআলা যখন উক্ত বান্দাকে কবর থেকে তুলবেন ফেরেশতা উক্ত লিপি সঙ্গে আনবেন। ঘোষণা হবে লোকটি কোথায়তাকে  আহাদ নামা দেয়া হবে। 

 আহাদনামাটি এরূপ-

اللهمَّ فاطر السموات والارض عالم الغيب والشهادة هو الرحمن الرحيم أنَّى عَهدْتُ اليك فى هذِه الحياة الدنيا بانك اَنت وَحْدُك لاشريك لك وأنَّ محمَّدًا عبدك ورسولك فلاتَكِلْنِىْ نَفْسى فَانّك أن تكلنى الى نفسى تُقَرَّبُنى مِن السّوء وتُبَاعِدُنِى مِن الخير وانّى لاأثِقُ اِلّا برحمتك فاجعل رحتك لى عهدًا عندك تُوَدِّيه الى يوم القيامة انك لاتخلف الميعاد-

হযরত ইমাম নকীহ বিন আজীল উপরোক্ত দো’আ/আহাদনামা সম্পর্কে বলেন-

اذا كَتَبَ هذهِ الدّعاء وجعل مع الميت فِى قبره وقَّاهُ الله فِتْنَةَ القبر وعذابه-

 অর্থাৎ দোআটি লিখে মৃতের সাথে কবরে রাখলে আল্লাহ্ তাআলা তাকে কবরের ফিতনা  আযাব থেকে রক্ষা করবেন। ফিকহের বিখ্যাত কিতাব ‘দুররে মুখতারে’ উল্লেখ রয়েছে-

كُتب على جبههُ الميت أو عمامتهِ أو كفنه عهد نامة يرجى ان يغفر الله للميت أَوصَى بَعضُهُمْ ففُعِلَ أنْ يكتب فِى جبهته وصدره- بسم الله الرحمن الرحيم- ففُعِلَ ثُمَّ رُيِىَ فِى المنام فسئِلَ فقال : لما وُضعت فى القبر جاءتنى ملائكة العذاب فلما رأوا مكتوبًا على جبهتى بسم الله الرحمن الرحيم قالوا اَمَنْتَ من عذاب الله-

 অর্থাৎমৃতের কপালে বা পাগড়িতে বা কাফনের উপর আহাদনামা লিখলে আশা করা যায় যেআল্লাহ্ মৃতকে ক্ষমা করবেন। কেউ অছিয়ত করলে তার কপালে এবং বক্ষের উপর যেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লিখে দেয়া হয়। অছিয়ত অনুযায়ী করা হলো।

 

 স্বপ্নে তাকে দেখা হলে তার অবস্থা জিজ্ঞাসা করা হলো। সে বলল, আমাকে যখন কবরে রাখা হলো তখন আমার কাছে আজাবের ফেরেশতারা আসল। তারা যখন আমার কপালে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লেখা দেখল তারা বলল তুমি আল্লাহর আজাব থেকে নিরাপদ হয়েছ।


[আদ-দুররুল মুখতার, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৫, কৃত: ইমাম আল্লামা আলাউদ্দীন খাসকপি হানাফী রাহ., ও মা’মুলাতে আহলে সুন্নাত কৃত: আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হামিদ কাদেরী বদায়ুনী রাহ.]

ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শর‍য়ী উত্তর 

প্রশ্নোত্তরইল্লাল্লাহ্ জিকির করা যাবে কিনা?

 

প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় অনেক লোক ইল্লাল্লাহ জিকির করে থাকেন । কিন্তু কিছু কিছু মওলভী ও অল্পশিক্ষিত ব্যক্তি একটি ইসিম নিয়ে আপত্তি করে- তাহলো ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করা নাকি তাদের মতে না-জায়েয। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর বিনীত আবেদন করছি।

 উত্তর: তরিকতের সবকে ‘ইল্লাল্লাহ্’ যে সবক খানা রয়েছে,তা তরিকতের শেখগণ স্বীয় মুরীদানকে অজিফা হিসেবে প্রদান করেছেন অর্থগত দিক দিয়ে সম্পূর্ণ শুদ্ধ। এই জিকিরটার অর্থ আল্লাহ্ নেই, আল্লাহ্ ছাড়া ইত্যাদি বলা অজ্ঞতা ও মুর্খতার নামান্তর। মূলত ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকিরটির আসলরূপ হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’।

অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সাধারণত: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করার পর ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করা হয়। তাই এখানে ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির এর ক্ষেত্রে ‘লা-ইলাহা’ প্রকাশ্যভাবে উল্লেখ না থাকলেও তা উহ্য থাকবে।

 আর তা উহ্য থাকার করিনা বা নিদর্শন হল ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকির করার পূর্বে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’-এর জিকির করা হয়। তখন ‘ইল্লাল্লাহ্’-এর অর্থ হবে আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ/উপাস্য নেই। যেমন নতুন চাঁদ উদিত হলে আরববাসীরা ‘হিলাল হিলাল’ তথা চাঁদ চাঁদ বলে চিৎকার করে। অথচ জাহেরীভাবে এটি বাক্য হিসেবে অসম্পূর্ণ। কেননা এখানে বিধেয় আছে উদ্দেশ্য উল্লেখ নেই।

সুতরাং এখানে ‘হাজা’ মুবতাদা তথা উদ্দেশ্যকে উহ্য মানতে হবে। তখন হবে ‘হাজা হিলালুন্’ অর্থাৎ এটা নতুন চাঁদ। পূর্ণ বাক্য। যদিও বা উচ্চারণের ক্ষেত্রে সংক্ষেপ করে ‘হিলাল’ বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ‘হাজা’ শব্দটি উহ্য মানতে হবে। অর্থ হবে এটা নতুন চাঁদ, তদ্রƒপ ‘ইল্লাল্লাহ্’ এর অর্থ হবে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। তাই এ সবক বা অজিফা আদায়কালে ২০/৩০ বার ৫০/১০০ বার পড়ার পর ‘ইল্লাল্লাহ্’ সহ মিলিয়ে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ সম্পূর্ণ পড়া বা উচ্চারণ করা হয়। এ রকম বহু উদাহরণ ক্বোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ এবং আরবী ভাষায় ব্যবহৃত বা উল্লেখ আছে। তাছাড়া ‘ইল্লা’ শব্দটির একটি অর্থ হয় ‘একমাত্র’ তখন ‘ইল্লাল্লাহ্’-এর অর্থ হবে একমাত্র আল্লাহ্ই উপাস্য। তাই এটাকে আরবী ব্যাকরণ মতে অশুদ্ধ বলার কোন অবকাশ নেই।

 সুতরাং ‘ইল্লাল্লাহ্’ জিকিরকে না-জায়েয বলা মূলত জ্ঞান শূন্যতা  মূর্খতার পরিচয়।

সহীহ বোখারী শরীফ ২য় খন্ডের মাগাজী অধ্যায়ে এবং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে- হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা-এর বাণী ‘ইল্লাল্ ইজখার’ অর্থাৎ- ইজখার ঘাস ব্যতীত পবিত্র হেরেমের অন্যান্য ঘাস কাটা যাবে না বা ‘ইল্লাল ইজখার’ অর্থাৎ- একমাত্র ইজখার বাক্যাংশটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। 

 

যেহেতু ‘মুসতাছ্না মিনহু’ কে উহ্য রেখে ‘মুসতাছনা’কে উল্লেখ করা, ‘মাওসুফ’কে উহ্য রেখে ‘সিফত’কে উল্লেখ করা এবং ‘মুবতাদা’কে উহ্য রেখে ‘খবর’কে উল্লেখ করা আরবী সাহিত্যের সৌন্দর্য। এতটুকু জ্ঞান যার কাছে নেই তার জন্য ক্বোরআন-হাদীসের অনুবাদ করা হারাম আর যদি ‘ইল্লাল্লাহ্’ না-জায়েয হয় তবে সহীহ বুখারীর হাদীসের উক্ত বাক্যাংশ ‘ইল্লাল ইজখার কি বৈধ নয়নাউযুবিল্লাহ।অতএববৈধ জিকিরকে অবৈধ বলা  না-জায়েয বলা জঘন্যতম মিথ্যা  মারাত্মক অপরাধ।এসব বদমাযহাবীতরিকত বিদ্বেষী হতে আল্লাহ্ তাআলা আমাদের হেফাজত করুক।

আ-মী-ন।

 

নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 


  • 10 Minute Madrasah ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন
  • 10 Minute Madrasah ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
  • 10 Minute Madrasah ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন
  • গুগল নিউজে 10 Minute Madrasah সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
  • 10 Minute Madrasah সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে
  • প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.10minutesmadrasah.com সাইট।
  •  

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Be alert before spamming comments.

    নবীনতর পূর্বতন

    Sponsored

    Responsive Ad