জেনে নিন ঘুমানোর আগে আমল বা রাতে ঘুমানোর আগে আমল

জেনে নিন ঘুমানোর আগে আমল বা রাতে ঘুমানোর আগে আমল rate ghumanor ager amal


জেনে নিন ঘুমানোর আগে আমল বা রাতে ঘুমানোর আগে আমল  

প্রিয় ইসলামী ভাই ও বোনেরা আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানব ঘুমানোর আগে আমাদের কি কি আমল করা উচিত । আমরা প্রতিদিনই ঘুমাতে যাই , তো ঘুমানোর পূর্বে আমাদের কি আমল করতে হয় তা জানানোর জন্য আজকের এই পোস্ট । আশা করব আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে । তো অবশ্যই একটু সময় নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন ইনশাআল্লাহ কামিয়াবী হবেন ।

উত্তর: ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, আমি দুঃখিত আপনার প্রশ্নের উত্তর দেরিতে দেওয়ার জন্য জী আপনি এটি দেখে নিন। 

মুমিন সর্বক্ষণ আল্লাহর জন্য নিবেদিত। প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত।

তাই মুমিনের জীবনের প্রত্যেক অংশ আল্লাহর স্মরণ-জিকির ও তার বিধান মোতাবেক অতিবাহিত হয়। ফলে মুমিন জীবনের প্রতিটি কাজে-কর্মে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুণ্য ও সওয়াব লাভে ধন্য হয়।

জীবনাচারের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো রাত্রিযাপনেও ইসলাম আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে। হাদিসের আলোকে রাতে ঘুমানোর কিছু আমল তুলে ধরা হলো।

ঘুমানোর আগে আমল বা রাতে ঘুমানোর আগে আমল

ঘুমানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি

ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল (সা.)। হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো।

ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সন্ধ্যাবেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘর থেকে বের হতে দিও না, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও (প্রভাব ফেলে) করে। ঘুমের আগে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্জ্বলিত সলিতাযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের লোককে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৩৩১৬)

শোয়ার স্থান নির্বাচনে সতর্কতা

নির্জন কোনো ঘরে একাকী রাত যাপনের বিষয়ে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাতযাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন। ’ (আহমাদ, হাদিস নং: ৫৬৫০)

বাসা-বাড়ির ছাদেও শোয়া উচিত নয়। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমায়, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৫০৪১)


এশার পরে অপ্রয়োজনে রাত্রি জাগরণ করবে না

এশার নামাজের পর অনর্থক গল্পগুজব এবং দীর্ঘ রাত পর্যন্ত অহেতুক জেগে থাকা মহানবী (সা.) অপছন্দ করতেন। তবে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন। মুসলমানদের সম্পর্কে কল্যাণকর পরামর্শের জন্য অনেক সময় রাতে তিনি আবু বকর (রা.)-এর বাসায় যেতেন। (তাহাবি শরিফ, হাদিস নং : ৭২০৩)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের রাতের গল্পগুজবে মত্ত হতে নিষেধ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ২৪৩৫)

আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে: বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং : ৪৮৭৯)। যারা কর্মব্যস্ত কিংবা রাতে দায়িত্ব পালন করতে হয়, তারা রাত জাগায় কোনো অসুবিধা নেই। বরং দায়িত্বের প্রতি তাদের নিষ্ঠাবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইসলাম।


বিছানা পরিষ্কার করা বা ঝেড়ে নেওয়া

ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর এ দোয়া পড়বে—হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৩২০)

ঘুমানোর আগে আমল বা রাতে ঘুমানোর আগে আমল

ঘুমানোর আগে যে আমলগুলো করব:

আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত

রাসূল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ২৩১১)

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত :  রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। ’ (বোখারি ও মুসলিম)।

সূরা কাফিরুন, ইখলাস, নাস ও ফালাক পড়ে ফুঁ দেওয়া

সূরা কাফিরুন, এখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া সুন্নত। নাওফাল আল-আশজায়ি (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে বলেছেন, তুমি সূরা ‘কাফিরুন’ পড়ে ঘুমাবে, এতে শিরক থেকে তুমি মুক্ত থাকবে। ’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ) 

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সূরা এখলাছ, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বুলাতেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫০১৭)

দোয়া পড়ে ঘুমানো

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নের পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বঞ্চনা নেমে আসবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)

হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো দোয়া পড়তে না পারলেও ছোট এ দোয়াটি পড়া যায়: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া’—অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনর্জাগ্রত হব। ’

এছাড়াও ‘আল্লাহুম্মা আস্লামতু নাফ্সী ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহী ইলাইকা ওয়া ফাউওয়ায্তু আমরী ইলাইকা ওয়ালজা’তু যাহরী ইলাইকা রাগ্বাতা ওয়া রাহবাতান ইলাইকা লা মালজা’আ মিনকা ওয়া লা মানজা’আ মিনকা ইল্লা ইলাইকা আ-মানতু বিকাতা-বিকা। আল্লাজি আনঝালতা ওয়া বি নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালাত। ’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি নিজেকে তোমাতে সমর্পণ করলাম, তোমার দিকে মুখ ফিরালাম, আমার কাজ তোমার প্রতি ন্যস্ত করলাম এবং তোমার প্রতি ভয় ও আগ্রহ নিয়ে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করলাম। তুমি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। তোমার প্রেরিত কোরআনের প্রতি ঈমান আনলাম এবং তোমার প্রেরিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনলাম। ’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

ফজিলত :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, হে অমুক, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখন নামাজের ন্যয় অযু করবে। তারপর তোমার ডান পার্শ্বের ওপরে শুবে এবং উক্ত দোয়া পড়বে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তুমি সেই রাতে মৃত্যুবরণ কর, তবে তুমি ইসলামের ওপর মৃত্যুবরণ করবে আর যদি তুমি ভোরে ওঠ, তবে তুমি কল্যাণের সঙ্গে ওঠবে। 











একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad