লাইলাতুল মেরাজ : মিরাজ এবং ইসরা এর পার্থক্য কি?

লাইলাতুল মেরাজ : মিরাজ এবং ইসরা এর পার্থক্য কি? What is the difference between Miraj and Isra?


লাইলাতুল মেরাজ : মিরাজ এবং ইসরা এর পার্থক্য কি?


রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই মোবারক নৈশ ভ্রমণ ও উর্ধ্বগমন যদিও ব্যাপক পরিভাষায় মি’রাজশরীফ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে কিন্তু মুহাদ্দিসীন ও মুফাসরিরীনদের পরিভাষায় রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত গমনকে ইসরা বলা হয়। কেননা কুরআনে পাকে আল্লাহতা’য়ালা ইহাকে ইসরা শব্দের দ্বারা বর্ণনা করেছেন। আর মসজিদে আকসা থেকে আসমানসমূহের দিকে উর্ধ্বগমনকে মি’রাজ বলা হয়। কেননা মি’রাজ বা উর্ধ্বগমন শব্দ বিশুদ্ধ হাদিসসমূহে বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ‘শরহে আক্বাইদে নসফী’ নামক কিতাবের ১৪৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে-

فالاسراء وهو من المسجد الحرام الى بيت المقدس قطعى ثبت بالكتاب والمعراج من الارض الى السماء مشهور ومن السماء الى الجنة اوالى العرش او غير ذلك احاد- 

অর্থাৎ اسراء ‘ইসরা’ মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদে আকসা পর্যন্ত হচ্ছে কেতয়ী বা একিনী যা কিতাবুল্লাহ দ্বারা প্রমাণিত। আর معراج মি’রাজ- জমিন তথা মসজিদে আকসা হতে আসমানসমূহের উপর পর্যন্ত উর্ধ্বাগমন মশহুর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তথা হতে বেহেশত অথবা আরশ পর্যন্ত তার উপর বিভিন্ন স্থানে উর্ধ্বগমন হলো খবরে ওয়াহিদ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অনুরূপ শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহ আলাইহি ‘আশআতুল লুমআত’ নামক গ্রন্থের ৪র্থ খ- ৫২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

اسراء از مسجد حرام ست تامسجد اقصی ومعراج از مسجد اقصی ست تاآسماں- واسراء ثابت ست بنص قرآن ومنکر آں کافرست ومعراج باحادیث مشھورہ کہ منکرآں ضال ومبتدع ست- 

অর্থাৎ মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আকসা পর্যন্ত হচ্ছে ইসরা। আর মসজিদে আকসা হতে আসমানসমূহ পর্যন্ত হচ্ছে মি’রাজ। ইসরা নসসে কুরআন তথা কুরআনের দলিল দ্বারা প্রমাণিত। তার অস্বীকারকারী কাফের এবং মি’রাজ মশহুর হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত। তাঁর অস্বীকারকারী গোমরাহ, বিদআতি ও পথভ্রষ্ট হবে। 

লাইলাতুল মেরাজ : স্বশরিরে জাগ্রত অবস্থায় মি’রাজ


তদ্রুপ আল্লামা মোল্লা জিউন রহমাতুল্লাহ আলাইহি তাঁর ‘তাফসিরাতে আহমদীয়া’ নামক কিতাবের ৫০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-


ولذا قال اهل السنة باجمعهم ان المعراج الى المسجد الاقصى قطعى ثابت باللكتاب والى سماء الدنيا ثابت بالخبر المشهور والى ما فوقه من السموت ثابت بالاحاد فمنكر الاول كافر البتته ومنكر الثانى مبتدع مضل ومنكر الثالث فاسق- 

অর্থাৎ মসজিদে আকসা পর্যন্ত মি’রাজ কেতয়ী বা অকাট্য যা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, আর দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত হাদিসে মশহুর দ্বারা প্রমাণিত এবং আসমানসমূহ হতে তার উপর পর্যন্ত হাদিসে আহাদ দ্বারা প্রমাণিত। অতএব প্রথম স্তর অস্বীকারকারী অবশ্যই কাফের, আর দ্বিতীয় স্তর অস্বীকারকারী বিদআতি, মুদিল বা গোমরাহ এবং তৃতীয় স্তর অস্বীকারকারী ফাসেক হবে। শরহে আকাইদে নাসাফি গ্রন্থের ১৪৪ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর পার্শ্বটীকায় উল্লেখ রয়েছে-

وفى كتاب الخلاصة من انكر المعراج ينظر ان انكر الاسراء من مكة الى بيت المقدس فهو كافر ولو انكر المعراج من بيت المقدس لا يكفر وذلك لان الاسراء من الحرام ثابت بالاية هى قطعية الدلالة والمعراج من بيت المقدس الى السماء ثبت بالسنة وهى ظنية الرواية- 

অর্থাৎ কিতাবুল খোলাসায় রয়েছে, মি’রাজশরীফকে যারা অস্বীকার করে তাদের ব্যাপারে লক্ষ্যণীয় যে, যদি ইসরা তথা মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত গমনকে কেউ অস্বীকার করে তবে সে কাফের হবে। আর যদি কেউ বায়তুল মুকাদ্দস থেকে মি’রাজ বা উর্ধ্বগমনকে অস্বীকার করে সে কাফের হবে না। (চরম গোমরাহ হবে।) কেননা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ কুরআনশরীফের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। যা কেতয়ীয়ুত দালালত বা অকাট্য দলিল দ্বারা সাব্যস্ত। আর বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে আসমানসমুহের দিকে উর্ধ্বগমন সুন্নাহ তথা মশহুর হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত যা জন্নী রেওয়ায়েত দ্বারা সাব্যস্ত। সারকথা মক্বাশরীফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত মি’রাজের এ অংশটুকুকে এনকার বা অস্বীকার করলে নিঃসন্দেহে কাফের হবে। মসজিদে আকসা থেকে আসমানের দিকে ঊর্ধ্বাগমনকে বলা হয় মি’রাজ। এটা মশহুর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কেউ যদি মি’রাজশরীফের এ অংশটুকুকে এনকার বা অস্বীকার করে তবে সে কাফের হবে না বটে, কিন্তু অবশ্য বিদআতী বা পথভ্রষ্ট হবে। উপরুন্তু সিদরাতুল মুন্তাহা থেকে আরশ পর্যন্ত অথবা জান্নাত পর্যন্ত কিংবা এতদ্ব্যতীত অন্যান্য বিভিন্ন স্থান পর্যন্ত যেগুলোতে আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হাবিবকে ভ্রমণ করিয়েছেন, এসব খবরে ওয়াহিদ দ্বারা প্রমাণিত। এগুলোকে অস্বীকার করলে শক্ত গোনাহগার হবে। মুদ্দাকথা হলো- মি’রাজুন্নবী তিনটি স্তরে বিভক্ত- 

১. মসজিদে হারাম হতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতের ভ্রমণ হলো ইসরা।

২. বায়তুল মুকাদ্দাস হতে আসমান হয়ে সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত ভ্রমণ হলো মি’রাজ।

৩. সিদরাতুল মুন্তাহা থেকে ঊর্ধ্বগমনে ভ্রমণ হলো মি’রাজের তৃতীয় স্তর। এটাকে ই’রাজ বলা হয়ে থাকে।

কেউ কেউ বলেছেন- মি’রাজ জান্নাত পর্যন্ত হয়েছে, আর কেউ কেউ বলেছেন আরশ পর্যন্ত। কেউ কেউ বলেছেন- আরশের উপরে এবং কেউ কেউ বলেছেন- জগতের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত মি’রাজ হয়েছে।

(শরহে আকাইদে নাসাফী)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad