বিজয় দিবস , ১৬ই ডিসেম্বর রচনা (বাংলা ২য় পত্র )

 

বিজয় দিবস , ১৬ই ডিসেম্বর রচনা (বাংলা ২য় পত্র )

বিজয় দিবস , ১৬ই ডিসেম্বর রচনা (বাংলা ২য় পত্র )

 

বাংলা ২য় পত্র রচনা : বিজয় দিবস 

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি তোমরা ভাল আছো । তো আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম বিজয় দিবস উপর রচনা । এই রচনা তোমরা যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের অনেক কাজে লাগবে । তো তোমাদের ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে Facebook messenger,  Whatsapp, Telegram, Instagram এবং IMO তে শেয়ার করতে পারো ।

বিজয় দিবস অথবা ১৬ই ডিসেম্বর রচনা

ভুমিকা: 

১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। এর প্রায় দুশো বছর পর ১৯৪৭ সালে বহু আন্দোলন ও সংগ্রামের বিনিময়ে পাকিস্তান নামে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও বৈষম্যনীতি পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের মানুষকে পুনরায় স্বাধীনতা বান্দোলনমুখী করে তোলে। ৯ মাসব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ফলে এ দিবসটি আমাদের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়।

বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপট :

 ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে পাকিস্তান রাষ্ট্র। বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে তখন উক্ত রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ ছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ। তাদের দুঃশাসন ও অর্থনৈতিক শোষণে এদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব- পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও তাদের নিকট শাসনভার না দিয়ে চালাতে থাকে ষড়যন্ত্র। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' বলে জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। সারা বাংলায় শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকহানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায় । গ্রেফতারের আগেই ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর পাক সেনাবাহিনীর প্রধান 'আত্মসমর্পণ করলে এদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।  ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির জয়যাত্রার শুরু। এই দিনে স্বপরিচয়ে আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ পাই। এই দিনটির জন্যই সারা বিশ্বে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের মর্যাদা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৬ই ডিসেম্বর তাই আমাদের বিজয় দিবস। প্রতি বছর সবিশেষ মর্যাদা নিয়ে জাতির কাছে হাজির হয় বিজয় দিবস। সব অন্যায়– অত্যাচার, শোষণ–দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিজয় দিবস আমাদের মনে প্রেরণা সৃষ্টি করে।এ কারণে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়।

মে দিবস অনুচ্ছেদ

বিজয়ের সেই পরিবেশ :

 ঢাকায় ১৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। আত্মসমর্পণের দৃশ্য দেখ উদ্দেশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। জনপদে কোথাও তিলমাত্র ইহ ছিল না। আনন্দের আতিশয্যে বিভিন্ন স্লোগানে তারা আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। তাদের হৃদয়ভরা আবেগ প্রকাশ পাচ্ছিল। আজ জাগ্রত জনতার বিজয় দিবস। আজ নব উদ্যমের জোয়ার এসেছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর খুশিতে যেন ফেটে পড়ে। সব ঘরবাড়ি, দালান-কোঠার শীর্ষদেশে শোভা পায় রক্ত-রঙিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ।

আত্মসমর্পণ : 

বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ১ মিনিটে আত্মসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পাকবাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও বিরান হাজার সৈন্যের নিয়মিত বাহিনী যুদ্ধবন্দি হয়। তাদেরকে বন্দি শিবিরে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দেওয়া হয় ।

বাঙালির বিজয়োৎসব: 

১৫ ডিসেম্বর রাত ১২.০১ মিনিট থেকে বাঙালির বিজয়োৎসব শুরু হয়। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী লাখো শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের জনগণ সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে মিলিত হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এ দিনে সরকারি ছুটি পালিত হয়। এদিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের সকল সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অসংখ্য মানুষ এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বিজয় দিবসের এ দিনে সারাদেশের সমস্ত স্কুল-কলেজ, ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ও যানবাহনের লাল-সবুজ পতাকা দেখা যায়। দিনব্যাপী টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। সারাদেশের সকল মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডায় মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। মোটকথা, দেশের প্রতি জেলায়, প্রতি ঘরে ঘরে বিজয়ের এ দিনটি আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়।

বিজয় দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : 

স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ করেছে। বাঙালির জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। প্রতি বছর বিজয় দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম মক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এরই ফলশ্রুতিতে তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা -সংস্কৃতি প্রভৃতি নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে, যা বিশ্বের কাছে জাতি হিসেবে বাঙালির মান-মর্যাদা আরো বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

উপসংহার:

লাখো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে, সহায়-সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ১৬ই ডিসেম্বর আজ আমাদের জাতীয় জীবনে অমূল্য মর্যাদার আসনে সমাসীন। আজ আমরা স্বাধীন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। এই দিনটি শুধুই আমাদের বিজয়ের দিন নয়, বেদনারও দিন। আমাদের চেতনা জাগরণেরও দিন। যাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে আমরা এই গৌরবের অধিকার পেয়েছি, তাঁদের সেই আত্মােৎসর্গের কথা মনে রেখে আমাদেরও সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশ ও জাতিকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই বিজয় দিবসের মহিমা অর্থবহ হয়ে উঠবে। প্রতিবছর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা ১৬২ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে থাকি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad