বাংলা রচনা : ডিজিটাল বাংলাদেশ সকল শ্রেণির জন্য

বাংলা রচনা : ডিজিটাল বাংলাদেশ সকল শ্রেণির জন্য Digital Bangladesh Essay And Composition For All Classes

 

বাংলা রচনা : ডিজিটাল বাংলাদেশ সকল শ্রেণির জন্য

Digital Bangladesh Essay And Composition For All Classes 

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি তোমরা ভাল আছো । তো আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম Digital Bangladesh or ডিজিটাল বাংলাদেশের উপর রচনা । এই রচনা তোমরা যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের অনেক কাজে লাগবে । তো তোমাদের ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে Facebook messenger, Whatsapp,Telegram,Instagram এবং IMO তে শেয়ার করতে পারো ।

বাংলা রচনা : ডিজিটাল বাংলাদেশ


 

সূচনা:

ডিজিটাল বাংলাদেশ হল প্রযুক্তির আলোকে একটি ভবিষ্যত সম্ভাবনার গল্প। বাংলাদেশ এখন এক বিরাট পরিবর্তন ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশকে একুশ শতকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং আইটি-চালিত 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তোলাই ছিল এর নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য। এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মুদ্রায়ন, সরকারী পরিষেবা ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে এই দেশটি বিশ্বের মাঝে আরও সম্মানিত এবং প্রগতিশীল প্রযুক্তিগত মানবাধিকার ও উন্নত আর্থিক উন্নয়নের জন্য একটি আদর্শ হতে পারে।   

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা:

১২ই ডিসেম্বর ২০০৮-এ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছিল যে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখিয়েছেন একটি উন্নত দেশ, একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনসংখ্যা, একটি পরিবর্তনশীল উৎপাদন ব্যবস্থা, একটি নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি—সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। ডিজিটাল বাংলাদেশ আসলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে যা আমরা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। 'বাংলাদেশ কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশন'১৭ থেকে ১২ নভেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত 'ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট' নামে প্রথম সামিটের আয়োজন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও অগ্রাধিকার বিষয়ে আলোচনা। 

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার 

ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা:

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। এর মাধ্যমে তৈরি হবে একটি উন্নত এবং বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ। 'ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে বৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত বাংলাদেশ, যা সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি।' এটা বাংলাদেশের মানুষের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন এবং আকাঙ্খা। বাংলাদেশের সকল মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণের এটাই সর্বোত্তম উপায়। স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে ধনী ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বৃদ্ধির অধিকার। এটিই হল এই একবিংশ শতাব্দীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথিকৃৎ:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথিকৃৎ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা, তিনি পথিকৃৎ হিসেবে লক্ষ অর্জনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছেন।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাতীয় অগ্রাধিকার:

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম জাতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করা।

এ জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নকে জাতীয় পর্যায়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। প্রতিটি বাড়ি ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সাথে তারযুক্ত বা তারবিহীনভাবে সংযুক্ত থাকতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের উন্নয়নকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যার মধ্যে দেশের সব অঞ্চলের মানুষকে ডিজিটাল ডিভাইসে সজ্জিত করা। এ ছাড়া অন্যান্য যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হবে সেগুলো হলো- জনগণের নিজস্ব সংযোগ, জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযোগ, সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, উপযুক্ত মানবসম্পদ সৃষ্টি, কৃষি, শিল্প ও ব্যবসায় রূপান্তর। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য:

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ১. প্রধান লক্ষ্য ২. রাজনৈতিক লক্ষ্য।

১. প্রধান লক্ষ্য: ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্তরে স্তরে এর অনুন্নত জীবনধারাকে বদলে বাংলাদেশের সমাজকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা।কার্যত এ দেশের মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা এবং জনগণের সরকারসহ সব স্তরের সব কাজকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা।

২. রাজনৈতিক লক্ষ্য: ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কিছু রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে। নিচে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

ক) জনগণের রাষ্ট্র: ‘ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে জনগণের উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন, মৌলিক মানবিক অধিকার সংরক্ষণ, সব সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা থাকবে। এই রাষ্ট্রের জনগণের কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সুলভ করা হবে।

খ) মৌলিক চাহিদা রাষ্ট্রকেই পূরণ করতে হবে: রাষ্ট্রকে জনগণের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। জনগণ যাতে করে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়, তার জন্য তাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাতে হবে এবং সেই প্রযুক্তি তার কাছে রাষ্ট্রকেই সহজলভ্য করতে হবে। ‘দরিদ্র জনগণকে জ্ঞানকর্মী বা ডিজিটাল প্রযুক্তিকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং গ্রামে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্প-বাণিজ্যসহ কৃষি, শিক্ষা, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।’

গ) রাজনৈতিক ধারা: ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো সরকার, জাতীয় সংসদসহ সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালনা করা, যাতে জনগণ সব সময়ই সংসদ, সরকার ও রাজনীতিতে ইন্টার অ্যাকটিভ পদ্ধতিতে অংশ নিতে পারে।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি:

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সরকারের কাজ করার পদ্ধতি ডিজিটাল করা, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো, ডিজিটাল ভূমিব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর, যোগাযোগব্যবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রচলন করা, তথ্যের অবাধ চলাচলের জন্য ডিজিটাল-ব্যবস্থা গ্রহণ।

 

অগ্রগতি:

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার প্রথম বছরে দৃঢ়তার সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে এর ভিত্তি বা প্রথম সোপান। সরকার আইসিটি নীতিমালা অনুমোদন করেছে, সেটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ, ই-কমার্স চালু করা, নতুন নতুন প্রযুক্তির লাইসেন্স প্রদান করা, সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা।

 

কিছু প্রত্যাশা:

তারহীন উচ্চগতির ইন্টারনেট ওয়াইম্যাক্স সহজলভ্য হোক এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক—এই সবার প্রত্যাশা। ‘আশা করি, বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল নেটওয়ার্কের কাজ সরকার তাড়াতাড়ি চালু করবে।’‘বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা যদি গ্রামের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করতে পারি, তাহলেই বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।’

 

ডিজিটাল বাংলাদেশবিষয়ক সতর্কতা:

বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে এর প্রভাব হিসেবে ডিজিটাল ডিভাইজ সম্প্রসারিত হতে পারে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ-সুবিধাভোগী শোষকগোষ্ঠী, ধনী বা বিশেষ সম্প্রদায়, শ্রেণী-গোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়ক হতে পারে। কিন্তু জ্ঞানভিত্তিক সমাজে জ্ঞানহীন হওয়ায় সুযোগহীন মানুষের জীবনযাপন আরও কষ্টকর হতে পারে।

 

উপসংহার:

২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে অর্থ ও শারীরিক শক্তির বদলে মেধা ও জ্ঞানের শক্তির প্রাধান্য থাকবে। কৃষিভিত্তিক একটি সমাজ থেকে বাংলাদেশ একটি সৃজনশীল ও মেধাভিত্তিক শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়ে মানবসভ্যতার ডিজিটাল যুগে নেতৃত্ব দেবে। আর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকার ও জনগণকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।











একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad