শবে বরাত: ফযীলত ও আমাদের করণীয়

 শবে বরা'তের ফযীলত
মূল: সুন্নাহ-ডট-ওর্গ (যুক্তরাষ্ট্র)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

ইমাম গাযযালী (رحمة الله) তাঁর ‘এহইয়ায়ে উলূম আল-দ্বীন’ গ্রন্থে লিখেছেন,


فضائل ليلة النصف من شعبان

كتب الأمام الغزالي: وليلة النصف من شعبان – ففيها مائة ركعة يقرا في كل ركعة بعد الفاتحة سورة الاخلاص عشر مرات كانوا لا يتركونها كما اوردناه في صلاة التطوع – وليلة عرفة‏ . ( إحياء علوم الدين )


অর্থাৎ, “মধ্য-শা’বান (মাস)-এর রাতে (অর্থাৎ, শবে বরা’তে) ১০০ রাকআত (নফল) নামায পড়বে, যা’তে প্রতি রাকআতে সূরা ফাতেহার পর ১০ বার সূরা এখলাস থাকবে; তাঁরা (সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফবৃন্দ) এটি তরক (ত্যাগ) করেন নি, যেমনিভাবে আমরা সম্পৃক্ত হয়েছি অতিরিক্ত নফল নামায ও আ’রাফাত রজনীর সাথে।” [গ্রন্থ সূত্র: ইমাম গাযযালী (رحمة الله) কৃত ‘এহইয়ায়ে উলূম আল-দ্বীন’]




শায়খ ইসমাঈল হাক্কী তাঁর কৃত ’তাফসীরে রুহুল বয়ান’ পুস্তকে বলেন,

وقال بعض المفسرين المراد من الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان ولها أربعة اسماء الاول الليلة المباركة لكثرة خيرها وبركتها على العاملين فيها الخير وان بركات جماله تعالى تصل الى كل ذرة من العرش الى الثرى كما فى ليلة القدر وفى تلك الليلة اجتماع جميع الملائكة فى حظيرة القدس.

অর্থাৎ, “তাফসীরকার উলামাদের কয়েকজন বলেন যে কুরআন মজীদে সুরা দুখান-এর ৩ নং আয়াতে উল্লেখিত ‘লাইলাতুল মুবারক’ তথা ’বরকতময় রজনী’ বলতে মধ্য-শা’বানের রাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর এই রাতের ৪টি নাম: প্রথমটি ‘বরকতময় রজনী’, যেহেতু অসংখ্য মানুষ এই রাতে নেক আমল পালন করেন; আর বাস্তবিকই এতে আল্লাহতা’লার সৌন্দর্যের নেয়ামত আরশ-কুরসি থেকে দুনিয়াপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিরাজমান প্রতিটি অণুকণার কাছে পৌঁছে থাকে, যেমনিভাবে তা ঘটে ’লাইলাতুল কদর’ রজনীতে, যা’তে ফেরেশতাকুল মহান আল্লাহতা’লার দরবারে হাজির হন।” [গ্রন্থ সূত্র: শায়খ ইসমাঈল হাক্কী প্রণীত ’তাফসীরে রুহুল বয়ান’, সুরা দুখান, আয়াত ৩ এঁর তাফসীর]

সুরা দুখানের ৩-৪ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে,

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ

فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ


“নিশ্চয় আমি (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। তাতে (ওই রাতে) বণ্টন করে দেয়া হয় প্রতিটি হেকমতময় কাজ।” [ক্বুরআ'নুল কারিম, সুরা দুখান, আয়াত ৩ - ৪]

এই আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে প্রাথমিক জমানার তাফসীরবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

أولاً: ما ورد فى فضل هذه الليلة في القرأن و تفسيره


ক্বুরআ'নুল কারিম ও তাফসীর সমূহে এই রজনীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে আলোচনা:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-সহ বেশির ভাগ উলামা বলেছেন ওই রাত ‘শবে কদরের’। পক্ষান্তরে,

হযরত একরিমাহ (رضي الله عنه) ও তাঁর সাথে একমত পোষণকারী উলামাবৃন্দ বলেছেন যে সেটা ’শবে বরাত’।

উপরোক্ত আয়াতটি (৪৪:৩-৪) প্রসঙ্গে মাহমূদ আলুসী নিজ তাফসীরগ্রন্থে বলেন,

– قال الألوسي في تفسيره عند قوله تعالى: ﴿فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِين﴾: “هي ليلة القدر على ما روى ابن عباس وقتادة وابن جبير ومجاهد وابن زيد والحسن، وعليه أكثر المفسرين والظواهر معهم، وقال عكرمة وجماعة: هي ليلة النصف من شعبان”. وقال الطبري في تفسيره عن هذه الآية الكريمة: واختلف أهل التأويل في تلك الليلة، أي ليلة من ليالي السنة هي؟ فقال بعضهم: هي ليلة القدر، ثم ذكرهم، وقال بعد سردهم: “وقال آخرون: بل هي ليلة النصف من شعبان، ولم يذكرهم”،.


অর্থাৎ, সর্ব-হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), কাতাদাহ (رضي الله عنه), ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه), মুজাহিদ (رضي الله عنه), ইবনে যায়দ (رضي الله عنه) ও আল-হাসান (رضي الله عنه)-এর মতানুযায়ী পবিত্র আয়াতুল কারিম (৪৩:৩ "إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ")-এ উল্লেখিত রাত হলো শবে কদর। আর এটি-ই অধিকাংশ মোফাসসেরীন তথা তাফসীরকারক উলেমার অভিমত। পক্ষান্তরে, হযরত একরিমাহ (رضي الله عنه) ও তাঁর দল বলেন, “এটি মধ্য শা’বানের রাত।”

আত্ তাবারী তাঁর তাফসীরে এই পবিত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: তাফসীর বিশারদমণ্ডলীর মাঝে এই রজনীর বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে: তা হলো, সেটি বছরের কোন্ রজনী? আর তাঁদের কেউ কেউ এটিকে 'লাইলাত আল ক্বদর' বলে মত প্রকাশ করেছেন, অতঃপর তিনি তাঁদের নাম উল্লেখ করেন; তিনি এরপর বলেন যে তিনি তাঁদের কারো কারো বর্ণনাও উল্লেখ করবেন।

অন্যান্য তাফসীরকারবৃন্দ অবশ্য এর সাথে ভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন। তাঁরা বলেন, “না, এটি মধ্য শা'বানের রজনী হবে”, অবশ্য তিনি তাঁদের নাম উল্লেখ করেন নি। [গ্রন্থ সূত্র: আল্লামা মাহমুদ আলুসী (رحمة الله) রচিত তাফসীরে রুহুল মা'আনী, ৩-৪ নং আয়াতের তাফসীর]

وقال النيسابوري في تفسير الآية الكريمة أيضًا: وأكثر المفسرين على أنها ليلة القدر لقوله تعالى: ﴿إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ﴾ (القدر:1)، وليلة القدر عند الأكثر في رمضان.

অর্থাৎ, আন্ নিসাপুরী তাঁর প্রণীত তাফসীরগ্রন্থে এই পবিত্র আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, “বেশির ভাগ তাফসীরকার এই রাতকে লাইলাতুল কদর বলে চিহ্নিত করেছেন। কেননা মহান আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান, ‘নিশ্চয় আমি তা (কুরআন) ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি’ (৯৭:০১)। আর অধিকাংশ উলামার মতে কদরের রাত রমযান মাসে।”

ثم نقل كلام الطبري وقال بعده: وزعم بعضهم كعكرمة وغيره أنها ليلة النصف من شعبان

অর্থাৎ, আমরা আত্ তাবারীর বক্তব্যের অংশ বিশেষও এখানে উদ্ধৃত করবো; তিনি বলেন, “হযরত একরিমাহ (رضي الله عنه)-এঁর মতো (প্রাথমিক যুগের) কতিপয় মুফাসসির দাবি করেন যে এই আয়াতে মধ্য শা’বানের রাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”

ما ورد من أحاديث في فضل هذه الليلة، ومن ذلك

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad