যে কারণে ডঃ মরিস বুকাইলি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন

যে কারণে ডঃ মরিস বুকাইলি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের মমি এল প্যারিসে। প্লেনের সিঁড়ি থেকেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন!




ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সার্জনরা রয়েছে আর তারা ফিরাউনের মমির ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে।

মমি গবেষণার প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ড. মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন (ক্ষত অংশগুলো ঠিক করা) করতে চাচ্ছিলেন। আর ড. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন ফিরাউন কিভাবে মারা গেল সেই বিষয়টিতে।

পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে চূড়ান্ত ফলাফল এলো। যাতে বলা হয়েছে— তার শরীরে লবণের অংশ আছে আর এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে (ফিরাউন) ডুবে মারা গিয়েছিল। আর ফিরাউনের মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র (লোহিত সাগর) থেকে তার লাশ তুলে দ্রুত মমি করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:  জেনে নিন মহানবী (ﷺ) এর ২১৩ টি মহা মূল্যবান বাণী

ফিরাউনের মমিটি প্রফেসর মরিসকে হতবাক করে দিল যে, কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকল অথচ এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে! কারণ ভেজা পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে আর প্রতিটি বস্তুকে দ্রুত পচনের দিকে নিয়ে যায়।

ড. মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করলেন যাতে তিনি বললেন— এটা একটা নতুন আবিষ্কার। তিনি জানান, সেই সময় তাকে কেউ ফেরাউনের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে প্রকাশ্যে আলোচনা না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর প্রতিবাদ করে বললেন যে, এরকম একটা বিশাল আবিষ্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়ক হবে, সেটা কেন জানানো যাবে না!

কেউ একজন তাকে বলল যে, কুরআনে ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা এসেছে। এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? এই মমি পাওয়া গিয়েছে মোটে ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাযিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে! আর প্রাচীন আরবরা তো মমি করার পদ্ধতিই জানতো না, মাত্র কয়েক দশক আগে তা আমাদের হাতে আবিস্কৃত হয়! ড. বুকাইলি ফিরাউনের লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীরভাবে ভাবছিলেন যে, মুসলিমদের কুরআনে কিভাবে ফিরাউনের লাশ সংরক্ষণের কথা এসেছে?

বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ.)-এর পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিণতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন আর ভাবছিলেনন— এটা কিভাবে ধারণা করা যায় যে, এই মমি যার সে মুসার (আ.)-এর পিছু নিয়েছিল? আর এটা কেমন করে সম্ভব যে, মুহাম্মাদ () ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন? এমন অনেক কিছুই ভাবছিলেন তিনি।


ডা. মরিস সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না, তিনি তোরাহ (তাওরাত) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে— পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না। ড. বুকাইলি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতে লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।

আরো পড়ুন: বখতিয়ার খিলজী: যে তুর্কি বীরের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলায় মুসলমানদের রাজনীতি

অতঃপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন। সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন। সেখানে পৌঁছে ডা. বুকাইলি ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন। তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন:


    'অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।’ [আল-কুরআন, ১০:৯২]


তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে তখনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করলেন যে, আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ]


ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্রাকটিস করেননি বরং এই সময়ে তিনি আরবী ভাষা শিখেছেন আর পবিত্র কুরআনে বিজ্ঞান বিষয়ক নির্দেশনা নিয়ে গবেষণা করেছেন।


    এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।’ [আল-কুরআন, ৪১:৪২]


১৯৭৬ সালে ড. মরিস বুকাইলি ‘বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান’ নামে একটি বই লেখেন যা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের টনক নাড়িয়ে দেয়। বইটি বেস্ট সেলার হয় এবং এটি প্রায় ৫০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad