ভাবসম্প্রসারণ : প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক

ভাবসম্প্রসারণ : প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক | Necessity is the mother of innovation


ভাবসম্প্রসারণ : প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক
প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক


প্রয়োজনই মানুষের প্রেরণা ও উদ্ভাবনের উৎস। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষের জীবনে নতুন নতুন ব্যবহার তৈরি হয়, মানুষ নতুন জিনিসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। মানুষের প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য উদ্ভাবিত হয়েছে সেই চাহিদা পূরণের জন্য মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টা থেকে। নতুন চাহিদার সাথে নতুন উদ্ভাবন এসেছে।

সৃষ্টির ঊষালগ্নে প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায় ছিল। মানুষ অপরিচিত এবং প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করার সময় সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। সেই প্রয়োজনীয়তার প্রথম আবিষ্কার ছিল আত্মরক্ষায় পাথরের হাতিয়ার। এটাই শুরু । তারপর, দীর্ঘ সময়ের মধ্যে, মানুষ বন্য জীবন থেকে আধুনিক সভ্য জীবনে বিবর্তিত হয়েছে। 

মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে, মানুষ একটি উন্নত জীবনধারার জন্য নতুন চাহিদা পূরণের জন্য নতুন জিনিস উদ্ভাবন করেছে। সর্বশেষ উদাহরণ সুপার কম্পিউটার। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতিটি উদ্ভাবনে মানুষের প্রয়োজন ভূমিকা পালন করে।

গৃহস্থালীর প্রয়োজনে উদ্ভাবন হয়েছে নানা আসবাবপত্র। নদীর ওপর ভেসে থাকার প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে ভেলা, নৌকা, জাহাজ। আকাশে উড়ার প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে বেলুন, উড়োজাহাজ। যুদ্ধের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে নানা মরণাস্ত্র। খেলাধুলার প্রয়োজনে খেলাধুলার নানা উপকরণ, রোগ নিরাময়ের প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হয়েছে ওষুধ ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, মহাশূন্যে বিচরণের জন্যে তৈরি হয়েছে মহাশূন্যযান। এভাবে প্রতিটি আবিষ্কারই মানুষের প্রয়োজনীয়তারই ফসল। 

মানুষের জীবনে প্রয়োজনের পরিসীমা ও পরিসর যতই বেড়েছে ততই সম্প্রসারিত হয়েছে উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্র। মানুষের সমস্ত কর্মকাণ্ডই আজ পরিচালিত মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রয়োজনকে ঘিরে। প্রয়োজনের মাত্রা ও গুরুত্ব যত বেশি, উদ্ভাবনের দিকটাও গুরুত্ব পায় তত বেশি। 

ক্যান্সার ও এইডস নিয়ে যে ব্যাপক গবেষণা এখন হচ্ছে তার কারণ এসব জীবনঘাতী রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার ব্যাপক আকাঙ্ক্ষা। মানুষের সমস্ত উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের লক্ষ্য মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে মনুষকে সুখ ও আনন্দ দান। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনীয়তার কোনো সীমা নেই। তাই উদ্ভাবনের ধারাও স্থির না হয়ে অগ্রসর হচ্ছে অব্যাহত ধারায়।

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক

মূলভাব : পৃথিবীর কোন কিছুই হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের কাজের প্রয়োজনীয়তার কারণেই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে।

সম্প্রসারিত ভাব : এই পৃথিবীতে কোন কিছুই দুর্ঘটনাক্রমে সৃষ্টি হয় না। এক সময় আমাদের পূর্বপুরুষরা বনে বাস করতেন। চকমকি দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। বিজ্ঞানীর আশ্চর্যজনক আবিষ্কারটি সে সময় অজানা ছিল। মানুষের দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তার চিন্তা বেড়েছে। মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা করে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করা হয়েছে।

মানুষ এক সময়ে একটা জিনিসের অভাব বুঝতে পেরেছে। গুরুত্বের সাথে প্রয়োজন উপলব্ধি করেছেন। অন্ধকার দূর করতে হবে, ফলে বিদ্যুৎ আবিষ্কৃত হয়েছে। ছিল না সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থা, না ছিল যানবাহন। রাস্তা, বাষ্প ইঞ্জিন, রেলপথ, অটোমোবাইল, এরোপ্লেন এবং অন্যান্য অনেক মেশিন আবিষ্কার করা হলো। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কথা শুনতে হবে। পর্দায় ইমেজ দেখতে হবে, তাই উদ্ভাবন হল ফিল্ম, টেলিফোন, টেলিস্কোপ, টেলিগ্রাফ, টেলিভিশন, ভিসিআর ইত্যাদি। প্রয়োজন না থাকলে এগুলো আবিষ্কৃত হতো না।

আলো জ্বালানো দরকার। তাই দেয়াশলাই, লাইটার উদ্ভাবন করেছে। আবার রোগ, শোক জরা-ব্যাধিতে দূরে নিক্ষেপ করার জন্য X-Ray, আলট্রাসনোগ্রাফীর উদ্ভাবন করেছে। নানা দূরারোগ্য ব্যাধির ঔষধ আবিষ্কার করার প্রয়োজনের কথাও তার মনে হয়েছে। সে আবিষ্কার করেছে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ইত্যাদি। এভাবে একটার পর একটার প্রয়োজনীতাই মানুষের আজকের সুখপ্রদ জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে।

প্রয়োজনই মানুষের চলার পথকে সহজ করছে। অর্থাৎ প্রয়োজনই উদ্ভাবকের জনক।


বাংলা ২য় পত্রের সারাংশ এবং সারমর্ম :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored