ইস্তিগফারের ফযীলত ও সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়া বাংলা উচ্চারণ

ইস্তিগফারের ফযীলত ও সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়া বাংলা উচ্চারণ


ইস্তেগফার শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া, আর তাওবা হলো আল্লাহর পথে ফিরে আসা। ২ টি শব্দের অর্থ প্রায় কাছাকাছি। আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া । আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে ক্ষমা করুন আমিন । তো আজকের আলোচনা হবে ইস্তিগফারের ফযীলত এবং সাইয়েদুল ইস্তেগফারের দোয়া এবং নিয়ম উচ্চারণসহ ।

ইস্তেগফারের ফজিলত ও ইস্তেগফার সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশঃ


ইস্তিগফার সম্বন্ধে কোরআনে বর্নিত আছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’(সুরা-৭১ নূহ, আয়াত: ১০)।

‘অতঃপর তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।’(সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ৩)।

‘আর আল্লাহ তাআলা আজাব দেবেন না তাদের, আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায়; আর আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তিগফার করে।’(সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৩৩)।

sayyidul istighfar in bangla

তওবা মানে কি বা istighfar dua bangla


তওবা অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে তওবা বলা হয়। তওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া। অর্থাৎ স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা। তওবার জন্য করণীয় হলো, স্বীয় কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, সেই অপরাধ আর না করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশিমাত্রায় মনোযোগী হওয়া।

তওবা সম্পর্কে কোরআনে রয়েছে, ‘হে ইমানদারেরা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো, আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ প্রবহমান।’ (সুরা-৬৬ তাহরিম, আয়াত: ৮)। ‘

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ (মুসলিম)

কিভাবে ইস্তেগফার করবেন?

ইস্তেগফার করার বা ক্ষমা চাওয়ার দোয়া সমূহ।

দোয়া-১: 

أَستَغْفِرُ اللهَ

উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ। 

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১] এছাড়াও সারাক্ষণ টয়লেট বাথরুম ছাড়া এই ইস্তেগফার টি পড়ে জিহবা ভিজিয়ে রাখুন এর ফজিলত অনেক বেশি।

 

দোয়া-২:*

মূল আরবীঃ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ 

উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]

দোয়া-৩:* 

মূল আরবীঃ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ 

উচ্চারণঃ আস্‌তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।

এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]

sayyidul istighfar in bangla

দোয়া-৪:*

 

মূল আরবীঃ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ / الغَفُوْرُ 

উচ্চারণঃ রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।

অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।

[আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২]

দোয়া-৫: (সাইয়েদুল ইস্তিগফার-বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দুআ:*

 

সায়্যিদুল ইস্তেগফার সব চেয়ে শ্রেষ্ট ইস্তেগফার। এবং এটি সকাল সন্ধ্যার জিকির। 

মূল আরবীঃ اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ 

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা

অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]

এই দোয়া গুলো পড়ার মাধ্যমে ইস্তেগফার করুন। তবে সব চেয়ে উত্তম হলো সায়্যিদুল ইস্তেগফার।


সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত


১৮৭১. হযরত আগার মুযানী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, “কখনো আমার অন্তরে সাময়িক অবহেলা চলে আসে। তখন আমি আল্লাহর কাছে একশত বার তওবা-ইস্তেগফার করি। (মুসলিম)

১৮৭২. হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন, “আল্লাহর শপথ! আমি দৈনিক সত্তর বারের অধিক আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাওবা করি।” (বুখারী)

১৮৭৩. হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার জান! তোমরা যদি পাপ না করতে, আল্লাহর তায়ালা তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়ে অপর এক জাতিকে প্রেরণ করতেন, যারা পাপ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইত আর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। (মুসলিম)

১৮৭৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গণনা করে দেখেছি একই বৈঠকে রাসূলুল্লাহ (স) একশ’ বার এ দোয়াটি করেছেন। “রাব্বিগফিরলী ওয়া তুব আলাইয়া ইন্নাকা আনতাত্তা-ওয়াবুর রাহীম”। অর্থাৎ, আমার রব! আমাকে মাফ করুন, আমার তাওবা গ্রহণ করুন। আপনি নিশ্চয়ই তাওবা গ্রহণকারী ও দয়াময়। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)

sayyidul istighfar in bangla

১৮৭৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সদা-সর্বদা ইস্তিগফার চাইতে থাকে, মহান আল্লাহ তাকে প্রতিটি সংকীর্ণতা অথবা কষ্টকর অবস্থা হতে বেরিয়ে আসার অবকাশ করে দেন; প্রতিটি দুশ্চিন্তা হতে তাকে মুক্ত করেন এবং তিনি এমন সব উৎস হতে রিযিকের অবস্থা করে দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (আবু দাউদ)

১৮৭৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বলে,  আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি আল্লাহর কাছে, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি। তার পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। এমনকি সে রণক্ষেত্র হতে পলায়ন করার মতো পাপ করলেও। (ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী ও হাকেম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)

১৮৭৭. হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা) নবী করীম (স) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী (স) বললেন, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (সর্বোত্তম ক্ষমা প্রার্থনা) হল, বান্দা বলবে, “হে আল্লাহ তুমি আমার রব, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই দাস! আমি যথাসাধ্য তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পালনে বদ্ধপরিকর। আমি যা করেছি তার মন্দ প্রভাব হতে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই। তুমি আমাকে যে সব অনুগ্রহ দিয়েছ তা স্বীকার করি। আমি আমার অপরাধও স্বীকার করি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর। কেননা, তুমি ছাড়া গোনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।” যে ব্যক্তি এই দু’আ পরিপূর্ণ বিশ্বাস সহকারে রাতের বেলা এই দু’আ পাঠ করে সে যদি সকাল হওয়ার মারা যায় তবে সেও জান্নাতী হবে । (বুখারী)

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

১৮৭৮. হযরত সাওবা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) সালাত শেষ করে তিনবার ইস্তিগফার (ক্ষমা চাইতেন) করতেন। তিনি আরও বলেন, “আল্লাহুম্মা আন্তাস-সালাম  …” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি শান্তি, তোমারই কাছ হতে শান্তি ও নিরাপত্তা পাওয়া যায়; তুমি বরকত ও কল্যাণময়, হে গৌরব ও সম্মানের মালিক!” ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেক করা হলো, মহানবী (স) কিভাবে ইস্তিগফার করতেন? তিনি বলেন, তিনি বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ (আল্লাহর কাছে মাফ চাই) আস্তাগফিরুল্লাহ। (মুসলিম)

sayyidul istighfar in bangla

১৮৭৯. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) ওফাতের পূর্বে অধিক সংখ্যায় এ দোয়া পাঠ করতেন, “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আস্তাগ ফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি, অর্থাৎ, আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে তাওবা করি।” ( বুখারী )

১৮৮০. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান! যে পর্যন্ত তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং আমার কাছে প্রত্যাশা করবে সে পর্যন্ত আমি তোমার গোনাহ ক্ষমা করতে থাকব। তা তোমাদের পাপের পরিমাণ যত বেশি যত বড় হোক না কেন। এ ব্যাপারে আমি কোন পারোয়া করবো না। হে আদম সন্তান! তোমার পাপের পরিমাণ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায় আর তুমি আমার কাছে মাফ চাও, তবে আমি তোমাকে মাফ করে দেব। এ ব্যাপারে আমি পরোয়াই করবো না। হে আদম সন্তান! যদি তুমি আমার কাছে পৃথিবী প্রমাণ পাপসহ উপস্থিত হও আর আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক তবে আমিও ঠিক পৃথিবী প্রমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে অগ্রসর হব। (তিরমিযী)

১৮৮১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (ইরশাদ করেছেন) হে মহিলাগণ! তোমরা দান কর এবং বেশি ইস্তেগফার কর। কেননা, আমি দেখেছি দোযখের অধিবাসীদের অধিকাংশই মহিলা। তাদের মধ্যে একজন বলেন, দোযখবাসীদের অধিকাংশই আমার মহিলাগণ তার হেতু কি? উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা অধিক মাত্রায় লা’নত অভিসম্পাত করে থাক এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ ও অবাধ্য হও। জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি তোমাদের যে কোন নারী যে কোন বুদ্ধিমান ও চতুর পুরুষকে যেভাবে হতবুদ্ধি করে দেয় তা আমি আর কোথাও দেখিনি। মাহিলাটি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের ত্রুটি অপূর্ণতা কি? তিনি বলেন, দু’জন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষ ব্যক্তির সমান আর ঋতুকালীন সময়ে কয়েক দিন তোমরা সালাত কায়েম করতে পারে না। ( মুসলিম)

sayyidul istighfar in bangla

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ বা সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম

হাদিসে অসংখ্য ইস্তেগফার বা ক্ষমার দো‘আ পাওয়া যায়। কিন্তু সব ইস্তেগফারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হল সাইয়েদুল ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ। নিচে সাইয়েদুল ইস্তেগফারের আরবি-অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলঃ

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ



উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ  বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত


অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই 





সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ঘটনা ও ইতিহাস এবং সাইয়েদুল ইস্তেগফার কখন পড়তে হয়


হযরত হাসান বসরী রহ. এক লোক একবার তাকে বলেছিল, “তার ফসল নষ্ট বা কম ফলন হয়েছে। তাকে কিছু আমল দিন " হাসান বসরী তাকে নিয়মিত ক্ষমা বা ইস্তেগফার করতে বললেন । কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে অভিযোগ করলেন, "আমি খুবই গরীব। আমাকে একটু ভরণপোষণ দাও” হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে নিয়মিত ক্ষমা চাইতে বলল।

এভাবে আরেকজন এসে সন্তান ধারণের বা সন্তান হওয়ার আমল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মিত ক্ষমা বা ইস্তেগফার করুন। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন, ওস্তাদ কি সবাইকে একই উপদেশ দিয়েছেন? 

এরপর বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী বলেন, “আমি আমার পক্ষ থেকে কিছু বলিনি। এটা বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর পবিত্র কোরআনে শিখিয়েছেন। অতঃপর তিনি সূরা নূহ এর আয়াত তিলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)

নূহ আলাইহিস সালাম বললেন, তোমার প্রতিপালকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। (ক্ষমা চাও) নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। তিনি আপনাকে প্রচুর বৃষ্টি ও আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন। তিনি আপনার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে আপনাকে সাহায্য করবেন। তিনি আপনার জন্য একটি বাগান তৈরি করবেন। .. তুমি, তোমার জন্য নদীকে প্রবাহিত কর।" (সূরা নূহ-১০-১২)

হতাশা, বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, একাকীত্ব ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়মিত এস্তেগফার খাওয়া উচিত। লাযেম হল যতখুশি তত ইস্তেগফার করা বা যতটা সম্ভব দিনরাত ইস্তেগফার করাকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তোলা। উঠতে বসতে ইস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল কষ্ট ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন।

সাইয়িদুল ইস্তিগফারের ফযীলত PDF

সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
(বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।)

অর্থাৎ, আমাদেরকে ফজর সালাতের পর একবার সাইয়েদুল ইস্তেগফার পথ করতে হবে এবং মাগরিব সালাতের পর একবার পাঠ করতে। 

তাছাড়া, ইস্তেগফারকারীকে  আল্লাহপাক অসংখ্য পুরষ্কার দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন। যেমনঃ 
  • আল্লাহপাক আমাদের ক্ষমা করে দিবেন।
  • অনাবৃষ্টির সমস্যা দূর করে রহমতের বৃষ্টি নাজিল করবেন।
  • যাদের সম্পদের অভাব তা দূর করে দিবেন।
  •  অনেকেরই সন্তানহীনতার সমস্যা আছে। সম্পদ আছে কিন্তু সন্তান নেই আল্লাহপাক সন্তানহীনতার সমস্যা দূর করে দিবেন। আল্লাহ এমন সন্তান দান করবে যা তাকে শক্তিশালী করে 
  • রিযিক বৃদ্ধি করে দিবেন।
সুতরাং আমাদের উচিত বেশি থেকে বেশি ইস্তেগফার করা। এবং অন্যদেরকে ইস্তেগফার করার জন্য উপদেশ দেওয়া। 

Source -

  • রিয়াদুস সালেহীন
  • সূরা মুহাম্মদঃ ১৯
  • সুরা নিসা ১০৬
  • সূরা নাসর ৩
  • সূরা আল-ইমরান ১৫,১৬,১৭
  • সূরা নিসা ১১০,১১১,১১২
  • সূরা আল-ইমরা ১৩৫
  • সূরা আনফাল ৩৩

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad