কাবাশরীফ ধ্বংসের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা

কাবাশরীফ ধ্বংসের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা The incident of Hasti forces planning to destroy the Kaaba Sharif


কাবাশরীফ ধ্বংসের পরিকল্পনাকারী হস্তীবাহিনীর ঘটনা


‘আবিসিনিয়া’র বাদশাহর পক্ষ থেকে ‘ইয়ামানে’ ‘আবরাহা’ নামক একজন শাসনকর্তা ছিল। সে দেখল, গোঠা আরবের লোকেরা মক্কার কাবা শরীফে হজ্জ করতে যায়। বিষয়টি তার মোটেও পছন্দ হলো না। তার ইচ্ছা হলো, মক্কার পরিবর্তে সবাই আমাদের দেশে আসুক। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে সে ভাবল, কাবাগৃহের অনুকরণে আমাদের এখানেই একটি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন গীর্জা নির্মাণ করবে। তাতে বিনোদন ও চিত্তাকর্ষণের সব ধরনের উপায়-উপকরণ থাকবে। তা হবে সর্বোচ্চ জাকজমকপূর্ণ। তাহলে মানুষ মক্কার সাদাসিধে সেই কাবা বর্জন করে মূল্যবান পাথরে সজ্জিত এই কাবার দিকে ছুটে আসবে। এতে মক্কার হজ্জ পর্বও বন্ধ হয়ে যাবে। সে এ উদ্দেশ্যে ইয়ামানের রাজধানী ‘সানআ’য় একটি কৃত্রিম কাবার ভিক্তি স্থাপন করে। সেখানে সে মন খুলে টাকা-পয়সা ব্যয় করে। কিন্তু এত কিছুর পরও মানুষ সে দিকে আকৃষ্ট হয়নি।

আরবরা, বিশেষ করে কুরাইশ গোত্রের লোকেরা যখন আবরাহার এ কৃত্রিম কাবা সম্পর্কে জানতে পারল, চরম উত্তেজিত হয়ে উঠল। একজন তো ঘৃণাভরে উক্ত কাবায় গিয়ে মলত্যাগ করে। কারো কারো মতে, আরবের একজন লোক আগুন জ্বালিয়েছিল। এক সময় ঐ আগুনের একটি স্ফুলিঙ্গ বাতাসের সঙ্গে উড়ে গিয়ে পড়ল ঐ ভবনে। ‘আবরাহা’ এতে ক্রুদ্ধ হয়ে কাবা শরীফকে ঘূলিসাৎ করার শপথ করে। 


শপথ অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক হাতি সংবলিত সৈন্যদল নিয়ে বাস্তবেই সে কাবা শরীফ ধ্বংস করার উদ্দেশ্য বের হয়। পথে আরবের যে গোত্র তার প্রতিরোধ করে, তাদের সাথে সে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তাদের কে পরাজিত করে। নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তখন কুরইশ গোত্রের নেতা এবং কাবা শরীফের মুতাওয়াল্লী। তিনি এ সংবাদ জানতে পেরে বললেন- ‘লোক সকল! তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা কর। কাবার মালিক-ই কাবাকে রক্ষা করবেন।’ আবরাহা পথ পরিস্কার দেখে বিশ্বাস করে নিল যে, এখন আর কাবা ধ্বংস করা কঠিন কাজ নয়। কারণ, সেদিক থেকে মোকাবেলা করার কেউ নেই।

আবরাহা যখন মক্কার নিকটবর্তী ‘মুহাস্সার’ উপত্যকার নিকট পৌঁছল, তখন সমুদ্রের দিকে থেকে হলূদ আর সবুজ রঙ্গের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পখির ঝাঁক আসতে দেখল। প্রতিটি পাখির ঠোঁটে ও পাঞ্জায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঙ্কর ছিল। ঐ পখিগুলো সৈন্যদের উপর কঙ্করের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগল। আল্লাহর কঙ্করজাতীয় সেই পাথরগুলো বন্দুকের গুলির চেয়েও বেশি কাজ করল। যারই গায়ে লাগত, একদিক থেকে প্রবেশ করে অপর দিক থেকে বের হতো। শরীরে এক আশ্চর্য ধরণের বিষাক্ত উপাদান রেখে যেত। তাতে অনেক সৈন্য ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। আর যারা পলায়ন করে, তারা মহা কষ্ট ভোগ করে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।


এ ঘটনায় বিশেষ গায়েবী ইঙ্গিত হল, আল্লাহ তাআলা যেমন অলৌকিকভাবে তার ঘরের হেফাজত করেছেন, সে ঘরের সবচেয়ে পবিত্র মুতাওয়াল্লী এবং সবচেয়ে বড় পয়গম্বরের হেফাজতও তিনি ঠিক সেভাবেই করবেন। তাছাড়া তিনি খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মনায়কদেরকে কাবা এবং কাবার সত্য সেবকদের মূলোৎপাটন করার কখনো সুযোগ দেবেন না। পবিত্র কুরআন এর সূরা ফীল এ এই ঘটনারই উল্লেখ করা হয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad