ইসলামে স্বাধীনতা ও মানবাধিকার - জালাল উদ্দিন আজহারী - 10 Minute Madrasah

ইসলামে স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী


ইসলামে স্বাধীনতা ও মানবাধিকার

সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী

ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানুষের প্রতি দয়া, স্নেহ, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, মমতাবোধ, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্যে্যর অনন্য দৃষ্টান্ত। সৃষ্টির প্রতি রহমত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন তাঁর প্রিয় হাবীব রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, হে হাবীব! আমি আপনাকে সৃষ্টি জগতের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি (সূরা আম্বিয়া ১০৭) তিনি বিশ^ মানবতাকে মানবীয় প্রভুত্ব এবং দাসত্ব থেকে মুক্ত করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি দাসকে সন্তানের মর্যাদায় ভূষিত করেছেন; ভাইয়ের সমমর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। দাসদের তিনি নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। যার কিরণ দূর—দূরান্তে বিস্তার লাভ করেছে। যিনি মানুষকে শুধু বাহ্যিক দাসত্ব থেকেই স্বাধীনতা দেননি, বরং সমাজ ও দেশ থেকে সব ধরনের নৈরাজ্য দূর করে সবাইকে করেছিলেন স্বাধীন। বিশ্বের এক বিশাল জনগোষ্ঠী অবলোকন করেছে, কিভাবে তিনি সর্বত্রে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি যেমন লড়েছেন তেমনি তিনি সকলকে করেছিলেনও স্বাধীন।

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত নবী—রাসূলের আগমণ হয়েছে তাঁরা সবাই সমাজ, দেশ ও জাতির অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। আর এই স্বাধীনতা অত্যাচারী শাসকের দাসত্ব থেকে জাতিকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেই হোক বা ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হোক। এক কথায় বলা যায়, সব ধরনের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে আল্লাহতা‘আলার প্রেরিত নবীদের কাজ।

আল্লাহতা‘আলা মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। স্বাধীনতা নিয়েই মানুষ জন্মগ্রহণ করে। মানুষের জন্মগত অধিকার হচ্ছে কেউ তাকে স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না এবং জোর—জবরদস্তি তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করবে না। বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনীতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিকভ দাসত্ব—শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। ভূ—খণ্ডের স্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এবং সমালোচনার স্বাধীনতা। সবক্ষেত্রেই ইসলাম মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছে। আর চিরকাল ধরে এসব বিষয়েই মানুষ তাদের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে আসছে।

স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদ্বিআল্লাহু আনহুর সেই বিখ্যাত উক্তিটি আজও পৃথিবীবাসীর নিকট স্মরণীয়। তিনি বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর বুকে তুমি মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছো, অথচ তার মা তাকে স্বাধীন মানুষ রূপেই জন্ম দিয়েছেন।’ আর  হজরত আলী রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহই যখন তোমাকে স্বাধীন মানুষ করে সৃষ্টি করেছেন, তখন কোনো মানুষ কখনো তোমাকে দাস বানাতে পারে না।’

মানবাধিকার কী? মানবাধিকার শব্দটি দু’টো আলাদা শব্দ দিয়ে গঠিত— মানব ও অধিকার। দু’টো শব্দের অর্থগত ব্যাপকতা রয়েছে। তবে সংক্ষেপে বলা যায়, মানবাধিকার হলো মানুষের প্রতি স্বীকৃতি। শুধু খাদ্য—বস্ত্রের মতো মৌলিক অধিকারই নয়, এতে অন্তর্ভুক্ত মানুষে—মানুষে সাম্য ও বাক স্বাধীনতার মতো আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারও।

মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, ধন—সম্পদ, জেন্ডার নির্বিশেষে সমভাবে দেখে তার সহজাত ও স্রষ্টা প্রদত্ত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করাই হচ্ছে 'মানব মর্যাদা'। মানুষের অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা রক্ষা, সহজাত ক্ষমতা ও প্রতিভার সৃজনশীল বিকাশ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় কতিপয় অধিকার স্বত্বই হচ্ছে 'মানব মর্যাদা'। মানুষের এই অধিকার তার জন্মগত এবং মানবিক মূল ও মর্যাদার সাথে সংশ্লিষ্ট।

মানবাধিকার ধারণা এবং তার বিকাশ:

ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকারের ধারণাটি আল্লাহ্ প্রদত্ত। ইসলামের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে নতুন ধারণা নিয়ে প্রচার করেছেন যে, মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি ও আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছে।(তীন, আয়াত—০৪)

ইসলামে ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে রয়েছে জীবনের নিরাপত্তা, নারীর অধিকার, হত্যা না করা, গীবত না করা, ক্ষমা প্রদর্শন, সদাচরণ, রাজনৈতিক অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকারসহ অনেক কিছু। সামাজিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মালিকানার অধিকার, সাম্যের অধিকার, চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অধিকার, লেখা, বলা ও প্রচার কার্যের অধিকার। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও চমৎকার অবয়বে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা—আত তিন : ০৪)

আরও বলা হয়েছে— ‘তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বাছাই করা হয়েছে, মানবের কল্যাণের জন্য।’ (সূরা—আল—ইমরান : ১১০) মানুষে মানুষে সাম্যের ধারণাটি পাওয়া যায় অন্য আয়াতে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক নর ও নারী হতে।’ (সূরা—আল হুজরাত : ১৩)

মানুষের বেঁচে থাকার ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার: প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জীবনে অধিকার ও জান—মালের নিরাপত্তা বিধানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছেন। নরহত্যা যেখানে নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল সেখানে নরহত্যাকে জঘন্য অপরাধ হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছেন ''সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বানানো এবং মানুষকে হত্যা করা।''(বুখারী—৫৬৩২)

বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে (যাকে মানবাধিকারের আদি সনদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়) প্রিয় নবী হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই তোমাদের জীবন, সম্পদ এবং সম্ভ্রম তোমাদের প্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত (অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে) পবিত্র।"(বোখারী শরীফ, হাদীস নং— ১২৫১—১২৫৩।) 

বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন— "হে মুসলিমগণ! আমার পরে তোমরা কাফেরদের কার্যকলাপে লিপ্ত হইও না যে তোমরা একে অপরকে হত্যা করিতে আরম্ভ কর।" তিনি বলেন, কোনো আরবের উপরে অনারবের প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য নেই কোনো অনারবের আরবের ওপর। সাদা মানুষের প্রাধান্য নেই কালো মানুষের উপর।(বোখারী শরীফ হাদীস নং— ১২৫১—১২৫৩।)

সমাজে মর্যাদার সাথে বাস এবং জানমালের হেফাজত হচ্ছে একজন মানুষের সামাজিক অধিকার। ইসলাম কাউকে কারো মর্যাদা হরণ ও অন্যায়ভাবে হত্যার অনুমোদন দেয় না। আল্লাহ বলেন : ‘অন্যায়ভাবে কেউ যদি কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।’(আল মায়েদা—৩২) এমনকি যুদ্ধের সময় বিরোধী পক্ষের নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভালো আচরণের কথা বলা হয়েছে।

স্বাধীনভাবে চলাচল, বসবাস, রাজনৈতিক আশ্রয় ও নাগরিকত্ব লাভের অধিকার: প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাষ্টে্রর প্রতিটি নাগরিককে রাষ্টে্রর যে কোন স্থানে স্বাধীনভাবে চলাচল ও বসবাসের অধিকার প্রদান করে। তিনি বলেন, "সমগ্র দেশ আল্লাহর আর মানুষ আল্লাহর বান্দা, তুমি যেখানে মঙ্গলজনক মনে কর বসবাস কর।" 

নিপীড়ন—নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক আচরণ থেকে মুক্তি লাভের অধিকার: শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোন ব্যক্তিকে শারীরিক—মানসিক শাস্তিদান বা তাকে কষ্ট দেয়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, "প্রকৃত মুসলিম হচ্ছে সে ব্যক্তি যা কথা বা হাত (কাজের নিপীড়ন) থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকেন।" (বুখারী ও মুসলিম)

শান্তি, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায়: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক স্পষ্ট ভাষায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন যে, "আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্যে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।"(আল আন্বিয়া—১০৭) কুরআনের এ বাণী পরিপূর্ণভাবে সত্যে পরিণত করেছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র মানব জাতির ভ্রাতৃত্ব, শান্তি, সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় তিনি যে অনন্য সাধারণ উদাহরণ রেখে গেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা আজো অদ্বিতীয় এবং সর্বজন স্বীকৃত অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত। কেননা তিনি কেবল মুসলিমদের আদর্শ ছিলেন না, ছিলেন গোটা মানব জাতির আদর্শ। আল্লাহ পাক তাঁকে এই মর্মে ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন: "বলুন (হে প্রিয় নবী), হে মানবজাতি, আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রসূল।"(আল আ’রাফ—১৫৮)

অন্য ধর্মের মানুষের অধিকার: ইসলামের শান্তির বাণী শুধু নিজ ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং পরমত ও পরধর্মের প্রতি সহনশীলতা ও সহানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন স¤প্রদায়ের লোকদের মধ্যে স¤প্রীতি ও ঐক্যে গুরুত্ব দেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হিজরি ৬২৪ সালের ‘মদীনা সনদ’ মানবাধিকারের স্বীকৃতির জন্য বিখ্যাত। এই সনদে ৪৭টি ধারা ছিল। 

ধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো— 

১. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদী, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান স¤প্রদায়সমূহ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে। 

২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান স¤প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। 

৩. রক্তপাত, হত্যা, ব্যভিচার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো। 

৪. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

এক্ষেত্রে অমুসলিম নাগরিকগণের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত দৃঢ় ভাষায় তিনি বলেছেন: "মনে রেখো! যদি কোন মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার উপর সাধ্যাতীত বোঝা (জিযিয়া বা প্রতিরক্ষা কর) চাপিয়ে দেয় অথবা তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করব।"(মিশকাত—৪০৪৭) প্রিয় নবী আরো বলেছেন: "কোন মু‘আহীদকে (মুসলিম রাষ্টে্র অবস্থানরত চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিককে) হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছর দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।" (বুখারী—৬৫৬১)

মানবাধিকার ধারণা স¤পর্কে পশ্চিমাদের দাবি: পশ্চিমারা এটা দাবী করে যে, মানবাধিকারের ধারণাটি বিশ্ববাসীর নিকট তারাই প্রথম উপস্থাপন করেছে। বস্তুত: পশ্চিমাদের এটা একটি সহজাত প্রবৃত্তি যে, পৃথিবীতে সকল প্রকার উন্নয়নের একমাত্র দাবী তারাই  করবে। অথচ আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে ইসলাম মানবাধিকারের পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্যাবলী ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘ বহু পরে ১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার নীতি ঘোষণা করে যা ৬১০ সালেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক জাতি, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, নির্বিশেষে সবার জন্য সমান প্রযোজ্য বলে ঘোষিত হয়েছিল। বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি জাতিসংঘ তার একটি সম্মেলনে যুদ্ধবন্দীদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে যা প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে ৬২৪ সালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদরের যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের প্রদান করে গেছেন।

পশ্চিমারা যেখানে মানবাধিকার নীতি বাস্তবায়নে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে, সেখানে ইসলামে মানবাধিকার আল কুরআন দ্বারা স্বতঃসিদ্ধ বা সুনিশ্চিত। এর প্রয়োগ জাতি ও ব্যক্তি উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ জন্যে আন্তর্জাতিক ঐতিহাসিক ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব মাইকেল এইচ হার্ট বিশ্বের একশত জন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে দি হান্ডে্রডস (ঞযব ঐঁহফৎবফং) শিরোনামে যে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন, তাতে তিনি হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর মানবতাবাদের জন্য বিশেষ করে বিদায় হজ্বের ভাষণে যে মানবাধিকারের ঘোষণা করেছেন তার জন্য সবার শীর্ষে স্থান দিয়েছেন।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজে আরব—অনারব, সাদা—কালো, ধনী—দরিদ্র, নারী—পুরুষ, মনিব—ভৃত্য, শিক্ষিত—অশিক্ষিত কোনো ভেদাভেদ ছিল না; একটিই পরিচয় ‘তোমরা সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটির তৈরী। (আবু দাউদ, হা—৫১১৬)মুসনাদে আহমদ, হা—৮৭২১)

আজকের প্রেক্ষাপটে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেসব মানবতাবাদী নীতি—দর্শন নতুন করে অধ্যয়ন ও পর্যালোচনার দাবী রাখে। কারণ তাতে হয়ত দেখা যাবে সমকালীন বিশ্বে মানুষের সার্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সেসব নীতি—দর্শনের প্রয়োগ কেবল গ্রহণযোগ্য বা প্রয়োগ উপযোগীই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে একান্ত আবশ্যকীয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad