ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের নিয়ম ও পদ্ধতি

ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের নিয়ম ও পদ্ধতি

  ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের নিয়ম ও পদ্ধতি

দাম্পত্য জীবনের মাসায়েল 

ইসলাম হল একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান । ইসলামে নাই এমন কিছুই নাই । আমাদের দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত সব কিছুই ইসলামে লিপিবদ্ধ আছে । সহবাস হলো এমনই একটি অংশ যা আমাদের জীবনের একটি অধ্যায়ও বটে । তো আজকে আমরা ইসলামে সহবাসের নিয়ম নীতি সম্পর্কে আলোচনা করব ।

সহবাসের শুরুতে নিয়ত করা - আরবিতে নিয়ত করতে হবে এমনটা নয়। নিয়ত মানে মনোস্থির করা। মনে মনে এই কামনা করা যে, আমি সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সহবাস করবো। এর মাধ্যমে নিজেকে হারাম থেকে বিরত রাখবো এবং সন্তান লাভের আশা থাকবে। হাদিসে আছে, স্ত্রী সহবাসও সাদকা। এর মাধ্যমে সাওয়াব বা নেকি লাভ করা যায়।

সহবাসের সময় দোয়া করা

শয়তান মানুষের রক্তের শিরা-উপশিরায় অবস্থান করতে পারে। এইজন্যে সহবাসের সময় দোয়া করতে হয়। স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে যে দোয়া পড়তে হয়-

بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا


উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।


’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে (যৌন মিলন বা সহবাস) আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের) কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, সে সন্তানকেও শয়তান (যাবতীয় আক্রমণ) থেকে দূরে রাখ।’

রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)

যেভাবে স্ত্রী সহবাস করা হারাম

ইসলামে স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে(Anal sex) সহবাস করা হারাম করেছে। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি মলদ্বারে সঙ্গম করে আল্লাহ তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান না।’ পায়ুপথ বা মলদ্বারে সহবাস করে ফেললে গোনাহগার হবে। এইজন্যে তওবা করতে হবে। এছাড়াও পায়ুপথে সহবাস করলে রোগ ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 উলামায়ে কিরাম স্ত্রীর সঙ্গে শয্যাযাপনের বিশেষ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো—


 ১. স্ত্রীর সঙ্গে শয্যাযাপন শুরু করার আগে নিয়ত সহিহ করে নিতে হবে। অর্থাৎ এই নিয়ত করা যে এই হালাল পন্থায় যৌন চাহিদা পূর্ণ করা দ্বারা হারামে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং তার দ্বারা কষ্টসহিষ্ণু হওয়া যাবে, সওয়াব অর্জন হবে এবং সন্তান লাভ হবে।

 ২. কোনো শিশু বা পশুর সামনে সহবাস করবে না।

 ৩. পর্দাঘেরা স্থানে শয্যাযাপন করা উচিত। তবে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পর্দা নেই, তাদের জন্য সহবাসের সময় বস্ত্রহীন হওয়া জায়েজ আছে।

 ৪. সহবাস শুরু করার আগে শৃঙ্গার (চুম্বন, স্তন মর্দন ইত্যাদি) করবে।

 ৫. বীর্য ইত্যাদি মোছার জন্য এক টুকরা কাপড় বা টিস্যু রাখবে।

 ৬. শয্যাযাপনের আগে বিসমিল্লাহ বলবে।

 ৭. আল্লাহর কাছে ইবলিস শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইবে। এ ক্ষেত্রে এই দোয়া পড়া যাবে, বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রজাকতানা।

 অর্থ : আমি আল্লাহর নাম নিয়ে এই কাজ আরম্ভ করছি। হে আল্লাহ, শয়তানকে আমাদের থেকে দূরে রাখুন এবং যে সন্তান আপনি আমাদের দান করবেন, তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন।

 ৮. সহবাস অবস্থায় বেশি কথা না বলা।

 ৯. সহবাস অবস্থায় স্ত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে না তাকানো।

 ১০. বীর্যপাতের সময় দোয়া পড়া—উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লা তাজআল লিশশায়তানি ফি-মা রজাকতানি নাসিবা।

 অর্থ : হে আল্লাহ, যে সন্তান আপনি আমাদের দান করবেন, তার মধ্যে শয়তানের কোনো অংশ রাখবেন না।

 ১১. বীর্যের প্রতি দীর্ঘ দৃষ্টি না দেওয়া।

 ১২. বীর্যপাতের পরই স্বামীর নেমে না যাওয়া। বরং স্ত্রীর ওপর অপেক্ষা করা, যেন স্ত্রীও ভালোভাবে তৃপ্তি অনুভব করতে পারে।

 ১৩. সহবাস শেষে প্রস্রাব করে নেওয়া।

 ১৪. সহবাসের পর সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে নেওয়া উত্তম। সম্ভব না হলে অন্তত অজু করে নেওয়া উচিত।

 ১৫. স্বপ্নদোষের পর সঙ্গম করতে হলে প্রস্রাব করে নেবে এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে।

 ১৬. একবার শয্যাযাপনের পর পুনর্বার লিপ্ত হতে চাইলে লজ্জাস্থান ও হাত ধুয়ে নিতে হবে।

 ১৭. সহবাসের পর অন্তত কিছুক্ষণ ঘুমানো উত্তম।

 ১৮. জুমার দিন স্ত্রীর সঙ্গে শয্যাযাপন করা মুস্তাহাব।

 ১৯. সহবাসের বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। এটা একদিকে নির্লজ্জতা, অন্যদিকে এতে স্বামী/স্ত্রীর হক নষ্ট করা হয়।

 ২০. সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের স্বাস্থ্য, মানসিকতা, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা উচিত। এটা মানবিকতা ও ভালোবাসার দাবি।

 ২১. ঋতুস্রাব অবস্থায় সহবাস থেকে বিরত থাকা ফরজ।

 ২২. ঋতুস্রাব অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে একত্রে শয়ন ও একত্রে পানাহার অব্যাহত রাখা সুন্নত।

 ২৩. ঋতুস্রাব অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে না।

 ২৪. ঋতুস্রাব অবস্থায় নামাজের সময় অজু করে নামাজের স্থানে নামাজ আদায় পরিমাণ সময় বসে থেকে সুবহানাল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া যায়, যেন ইবাদতের অভ্যাস বজায় থাকে।

 ২৫. ঋতুস্রাব অবস্থায় কলেমা, ইস্তিগফার, আল্লাহর নাম নেওয়া জায়েজ।

 ২৬. গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় মসজিদে গমন করা, কাবা শরিফ তাওয়াফ করা, কোরআন শরিফ স্পর্শ করা বা তিলাওয়াত করা এবং নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। তবে দোয়া হিসেবে (দোয়ার নিয়তে) কোনো আয়াত পড়া যাবে। যেমন—দোয়ার নিয়তে রাব্বির হামহুমা... ইত্যাদি পড়া যাবে।

 ২৭. গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় কলেমা, দরুদ শরিফ, জিকির, ইস্তিগফার বা কোনো অজিফা পাঠ করতে নিষেধাজ্ঞা নেই।

 ২৮. গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় পানাহার করা বৈধ।

 ২৯. গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় দ্রুত গোসল করা উচিত। তবে কোনো কারণে গোসল করতে বিলম্ব হলে রান্নাবান্না করতে আপত্তি নেই।

 ৩০. গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় সময়ের স্বল্পতার দরুন গোসল করতে দেরি হলে আগে সাহরি খেয়ে নেবে। এরপর গোসল করে নেবে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।

 দাম্পত্যজীবনের এসব মাসয়ালার সঙ্গে ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান যুক্ত থাকায় এবং পাঠকের অনুরোধ রক্ষার্থে মাসয়ালাগুলো প্রকাশ করা হলো


  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad