মৃত ব্যক্তিগণ কি জীবিত ব্যক্তিগনের দোয়া দরুদ শুনতে পান?

 প্রশ্ন : আচ্ছা! মৃত ব্যক্তিগণ কি জীবিত ব্যক্তিগনের দোয়া দরুদ শুনতে পান? এবং যিয়ারত কারীকে চিনতে পারেন?


উত্তর : অবশ্যই চিনতে পারেন এবং তাদের কথা বার্তা ও দোয়া দরূদও শুনতে পান। এ কারণেই নবী করিম (দ.) হাদীসে বলেছেন- প্রথমে কবরবাসীগনকে সম্বােধন করে সালাম করতে হবে। পরে দোয়া দরূদ পড়তে হবে । হযরত রাসুল করিম (দ.) নিজেই মদিনা শরীফের জান্নাতুল বাকীতে গমন করে প্রথমে ইন্তেকাল প্রাপ্ত সাহাবাগণকে সম্বােধন করে সালাম দিতেন- পরে দোয়া করতেন। তাঁদের সাথে কথা বার্তা ও বলতেন। যদি তাঁরা না শুনতেন বা না বুঝতেন- তাহলে নবী করিম (দ.) কি তাঁদের সাথে ঐরূপ আচরণ করতেন? কখনই নয়। কথা শুনেন না এবং বুঝেন না- এমন লােকদের সাথে নবী করিম (দ.)-এর কথা বলার চিন্তা করাই বরং বেদ্বীনী ও কুফরী।

প্রশ্ন : আচ্ছা! কবরবাসীগণ যে শুনতে পান-তার দলীল কি?

উত্তর:

১। প্রথম দলীল ও ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া কিতাবুল কুবুর গ্রন্থে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন।

عَنْ عَاٸِشَةَ رَضِیَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّی اللهُ عَلَیْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ رَجُلٍ یَّزُوْرُ قَبْرَ اَخِیْهِ وَیَجْلِسُ عِندَهُ اِلَّا اِسْتَأْنَسَ بِهٖ وَرَدَّ عَلَیْهِ حَتّٰی یَقُوْمَ-

অর্থ: হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন -নবী করিম (দ.) এরশাদ করেছেন-


“যে কোন ব্যক্তি আপন মুসলমান ভাইয়ের কবর জিয়ারত করে তার কবরের পাশে বসতে কবরবাসী শান্তি লাভ করে তৃপ্ত হয় এবং তার সালামের জওয়াব দেয়- যে পর্যন্ত জিয়ারতকারী সেখান থেকে না প্রস্থান করে।” (কিতাবুল কুবুর)


এতেই প্রমাণিত হলাে- প্রত্যেক কবরবাসীই সালাম শুনেন ও তার জবাব দেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত জিয়ারতকারী সেখানে অবস্থান করেন- কবরবাসী তাদের সান্নিধ্যে শান্তি লাভ করে তৃপ্ত হন।



২। দ্বিতীয় দলীল:


কিতাবুল কুবুর গ্রন্থে ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন।


عَنْ اَبِیْ هُرَیْرَةَ قَالَ اِذَا مَرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ اَخِیْهِ رَدَّ عَلَیْهِ السَّلَامَ وَعَرَفَهٗ وَاِذَا مَرَّ بِقَبْرِ لَایَعْرِفُهٗ فَسَلَّمَ عَلَیْهِ رَدَّ عَلَیْهِ السَّلَامَ-


অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হাদীস বর্ণনা করেন। যখন কোন মুসলমান আপন পরিচিত কোন মুসলমান ভাইয়ের কবর যিয়ারত করে- তখন কবরবাসী তার সালামের জাওয়াব দেয় এবং তাকে চিনতে পারে। আর অপরিচিত লােকেরা যিয়ারত করে সালাম দিলে শুধু সালামের জওয়াব দেয়।”

এতেও প্রমাণিত হলে যে, কবরবাসী সালাম শুনেন ও জওয়াব দেন। যিয়ারতকারী পরিচিত হলে মৃত ব্যক্তি তাকে চিনে। সুবহানাল্লাহ। সাধারণ কবরবাসীর যদি এ অবস্থা হয়- তাহলে অলীগনের অবস্থা কি হবে!

প্রশ্ন: আচ্ছা! যিয়ারত বিরােধী লোকেরা প্রায় কুরআন মজিদের একটি আয়াত দিয়ে প্রমান করতে চায় যে, মৃত কবরবাসীরা শুনেনা।

আয়াত খানা এই-

وَمَا اَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِی الْقُبُوْرِ-

“হে রাসুল আপনি কবরবাসীগণকে শুনাতে পারবেন না।” এতে বুঝা যায় যে, কবরবাসীগণ শুনেন না। এর জবাবও সঠিক ব্যাখ্যা কি?



উত্তর: বিরােধীদের পূর্বতন নেতা এবং ইবনে তাইমিয়ার সাগরিদ ইবনে কাইয়েম কিতাবুর বহু নামক গ্রন্থে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেছে-


اِنَّ سِیَاقَ الْاٰیَةِ یَدُلُّ عَلٰی اَنَّ الْمُرَادَ اَنَّ الْکَافِرَ الْمَیِّتُ الْقَلْبِ لَا تَقْدِرُ عَلٰی اِسْمَاعِهٖ اِسْمَاعًا یَنْتَفِعُ بِهٖ کَمَا اَنَّ مَنْ فِی الْقُبُوْرِ لَا تَقْدِرُ عَلٰی اِسْمَاعِهِمْ اِْسمَاعًا یَنْتَفِعُوْنَ بِهٖ.. وَلَمْ یَرُدَّ سُبْحَانَهٗ اَنَّ اَصْحَابَ الْقُبُوْرِ لَا یَسْمَعُوْنَ شَیْٸًا اَلْبَتَّةَ کَیْفَ وَقَدْ اَخْبَرَ النَّبِیُّ صَلَّی اللهُ عَلَیهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُمْ یَسْمَعُوْنَ خَفْقَ نِعَالِ الْمُشَیِّعِیْنَ وَاَخْبَرَ اَنَّ قَتْلٰی بَدْرٍ سَمِعُوْا کَلَامَ الرَّسُوْلِ وَخِطَابَهٗ وَشَرَعَ السَّلَامَ عَلَیْهِمْ اَیْ اَلْاَمْوَاتِ بِصِیْغَةِ الْخِطَابِ الَّذِیْ یُسْمَعُ وَاَخْبَرَ اَنَّ مَنْ سَلَّمَ عَلٰی اَخِیْهِ الْمُٶْمِنِ رَدَّ عَلَیْهِ السَّلَامَ.. وَهٰذِهِ الْاٰیَةُ نَظِیْرُ قَوْلِهٖ تَعَالٰی اِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰی وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ اِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِیْنَ.


অর্থ: "উক্ত আয়াতের পূর্বাপর ধারাবাহিকতায় একথায় বুঝা যায় যে- উক্ত আয়াতের সঠিক অর্থ হলাে-“হে রাসুল, আপনি মৃত ক্বলবের অধিকারী কাফেরদেরকে হেদায়াতের বাণী কখনাে শুনাতে পারবেন না- যদ্বারা তারা হেদায়াত পেতে পারে- যেমন শুনাতে পারেন না মৃত কবরবাসীকে যাদ্বারা তারা উপকৃত হতে পারে। আল্লাহ্ তায়ালা উক্ত আয়াতে একথা তাে বলেননি- যে, মৃত ব্যক্তিরা মােটেই কোন কথা শুনতে পায়না। বরং বলেছেন- আপনি কবরবাসীকে হেদায়াতের বাণী শুনালে যেমন তারা উপকৃত হতে পারেনা- তদ্রুপ মৃত ক্বলবের কাফেরগনকেও হেদায়াতের বাণী শুনাতে পারবেন না। তারা আপনার হেদায়াতের বাণী দ্বারা উপকৃত হবেনা। এখানে কেবল হেদায়াতের উপমা দেওয়া হয়েছে। কানে শ্রবণ করার কোন নিষেধ বাণী এখানে নেই। কেননা, মৃত মুসলমান তো দূরের কথা মৃত কাফেরগনও যে শুনতে পায়, তার প্রমান পাওয়া যায়- বদরের বা নিহত ৭০ জন কোরাইশ সর্দারের সাথে নবী করিম (দ.)-এর কথা বার্তার মাধ্যমে। নবী করিম (দ.) বদরের একটি গর্তে নিক্ষিপ্ত ৭০ জন কাফের সর্দারকে সম্বোধন করে তিরস্কার মূলক কথাবার্তা বলেছিলেন এবং কাফেররা তাঁর কথা শুনতে পেয়েছিল। হযরত ওমর (রা.) বলেছিলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহু। আপনি এমন মৃত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলছেন- যারা শুনতে পায়না। তখন নবী করিম (দ.) বলেছিলেন-

مَا اَنْتُمْ بِاَسْمَعَ لِمَا اَقُوْلُ مِنْهُمْ-

“হে ওমর! তোমরা তাদের চেয়ে আমার কথা বেশী শুনতে পাওনা।”


এতে বুঝা যায়- মৃত কাফেরদের শ্রবণ শক্তি জীবিত লােকদের চেয়ে বেশি। তাহলে মৃত মুসলমানের শ্রবণ শক্তি কতটুকু হতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়। আসলে আয়াতের মধ্যে কানের নয় বরং অন্তরের শ্রবণ শক্তির কথায় বলা হয়েছে- যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। নবী করিম (দ.) হাদীস শরীফে আরও এরশাদ করেছেন- মৃত ব্যক্তিরা দাফনকারী ব্যক্তিদের বিদায় কালীন সময়ে তাদের পায়ের জুতার শব্দও শুনতে পান। তিনি মৃত ব্যক্তিদেরকে প্রথমে সালাম দিতেন সম্বোধন মূলক বাক্য দ্বারা- যা তারা শুনতে পায়। তিনি আরও এরশাদ করেছেন- যারা আপন মৃত মুসলমান ভাইদেরকে সালাম দিবে, তারা উক্ত সালামের জওয়াব দিয়ে থাকেন।


বিরোধী দলের উপস্থাপিত অত্র আয়াত খানা আল্লাহ্ তায়ালার অন্য একটি আয়াতের মত যেখানে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন- “হে রাসুল! আপনি মৃত ব্যক্তিদেরকে হেদায়াতের বাণী শুনালে যেমন তারা উপকৃত হতে পারেনা- তদ্রুপ বধির ব্যক্তিও (কাফের) যখন হেদায়াতের বাণী শুনে পিছটান দিয়ে ফিরে যায়, তাদেরকেও আপনি হেদায়াতের বাণী শোনাতে পারবেন না" (ইবনুল কাইয়েমের ব্যাখ্যা শেষ)।


এই আয়াতে এবং বিরােধীদের উপস্থাপিত আয়াতে কানে শ্রবনের নিষেধাজ্ঞা মূলক কোন ইঙ্গিত নেই- বরং কলবের শ্রবণের কথায় বিধৃত হয়েছে উক্ত দু'টি আয়াতে। সুতরাং বিরােধীদের ব্যাখ্যাটি ভুল ও ভ্রান্ত এবং প্রতারণা মূলক। বরং মৃত ব্যক্তিরা দেখে ও চিনে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad