তারাবীহ নামাজ কতো রাকাত। ৮ রাকাত না ২০ রাকাত ? (ﷺ)

 তারাবীহ নামাজ কতো রাকাত? ৮ রাকাত না ২০ রাকাত?


চলছে বরকতময় রমজান মাস। সারাদিন রোজা রাখার পর আসে তারাবীহের পালা। সর্বসম্মতো মতে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তবে রমজান মাস আসলে নব্য উদ্ভাবিত আহলে হাদীস নামক একটি দল তারাবীহ নামাজের রাকাত নিয়ে মুসলমানদের মাঝে প্রচুর পরিমাণে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে থাকে।

এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে আপনাদের জন্য তারাবীহ নামাজের রাকাত হাদীসের দলীল দ্বারা প্রমাণ করে দেব ইনশাআল্লাহ। 

তারাবির নামাজ ২০ রাকাত না ০৮ রাকাত?




আট রাকাত তারাবীহর সূচনাঃ -⤵️

রাসূল (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম (রাযিঃ), তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবীহর নামায বিশ রাকাত।

কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে সর্বপ্রথম এক লা-মাযহাবী মৌলভী সাহেব আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী আট রাকাত তারাবী নামায পড়া সুন্নত হওয়ার দাবি করেন। কিন্তু কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে তৎকালীন প্রাজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে কেরাম উক্ত আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৩৭৭ হিজরীতে আরবে শায়েখ নসীব রেফায়ী ও নাসীরুদ্দীন আলবানী সর্বপ্রথম আট রাকাত তারাবীর মত প্রকাশ করেন। তখন শায়েখ আতিয়্যা সালিমসহ আরবের জমহুর উলামায়ে কেরাম তাদের উক্ত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীর আমলকে অব্যহত রাখেন। যা আজো অব্যাহত রয়েছে।

☑সুতরাং আট রাকাত তারাবী পড়ার মতকে অনুসরণের অর্থ হলো, সাহাবা ও তাবেয়ীগণের অনুসৃত আমলকে প্রত্যাখ্যান করে নব্য সৃষ্ট বিদআতি দলের অনুসরণ করা।


তারাবীহ নামায বিশরাকাতের প্রমাণঃ -⤵️

✅★

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ

📚হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির নামায পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}

✅★

ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺧﺮﺝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺫﺍﺕ ﻟﻴﻠﺔ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺼﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﻭﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻭﺗﺮ ﺑﺜﻼﺛﺔ


হযরত জাবের (রাঃ) বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল (ﷺ) বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}


লা মাজহাবী ভাইয়েরা কোথায়?


সহীহ হাদীসের দলিল দ্বারা তারাবিহের ২০ রাকাআত নামাজ বুঝিয়া নেন। না বুঝে তর্ক করবেন না, না বুঝে তর্ক করে মূর্খরা।

✳রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও মুসলিম উম্মাহর অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা হলো তারাবির ২০ রাকাত নামাজ। তারাবীহ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস সমূহ থেকে কিছু সহিহ হাদিস দলিল এখানে উপস্থাপন করা হলো।

☑১ নং দলিল: ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর উস্তাদ ইমাম আবু বকর ইবনে শায়বা (রহঃ) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি এবং বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ২/ ৩৯৪, হাদিস নং ৭৬৯০; সুনানে কুবরা ২/৪৯৮; মুজামে কাবির ১১/৩৯৬; আল- মুনতাখাব হাদিস নং ৬৫৩; মুজামে আওসাত ১/৪৪৪, হাদিস নং ৮০৭)।

☑২ নং দলিল : রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা আমার সুন্নতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬০৭; সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৬৭৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৬৬৯২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৫;১/২৯)

সহিহ সনদে প্রমাণিত যে, খুলাফায়ে রাশেদীন বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) বলেন- বিশ রাকাত তারাবি খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের দ্বারা প্রমাণিত। (মাজামুউল ফাতাওয়া ২৩/১১৩)।

☑৩ নং দলিল : রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবিদের নিয়ে মাত্র তিন দিন জামাতের সাথে তারাবি আদায় করার পর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জামাতের সাথে তারাবি পড়া ছেড়ে দিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বাকী জীবনে, আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে এবং উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থাই বিদ্যমান ছিলো। (সহিহ বুখারি ১/২৬৯, সহিহ মুসলিম ১/২৫৯; সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৫)

রমজান মাসের কোন এক রাতে (১৪ হিজরীতে) হযরত উমর (রাঃ) মসজিদে নববিতে গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে, মসজিদের বিভিন্নস্থানে ছোট ছোট জামাত হচ্ছে। তিনি ভাবলেন সকল নামাজিকে এক ইমামের পিছনে একত্র করে দেওয়া উচিত। তখন তিনি জামাতে তারাবি পড়ার নির্দেশ জারি করেন এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) কে ইমাম বানিয়ে দেন। আর তিনি সাহাবিদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়াতে লাগলেন। (সুনানে আবু দাউদ ১/২০২)🔚

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad