রমজান মাসের - রোজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা মাসায়েল

بِســــــــمِ اللّــہِ الرّحمٰـــــنِ الرَّحِیـــــــم

রমজান মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা মাসায়েল পর্ব-০১ 


মাসআলা:-০১) প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক বালেগ মুসলিমের উপর রমযানের রোযা ফরয। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-

فمن شهد منكم الشهر فليصمه

অর্থ:- সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। [সূরা বাকারা : ১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭২]

রমজান মাসের - রোজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা মাসায়েল



মাসআলা:-০২) শাবানের ২৯ তারিখ দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে পরদিন থেকে রোযা রাখতে হবে। নতুবা শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করার পর রোযা রাখা শুরু করবে।

عن ابن عمر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه ذكر رمضان، فقال : لا تصوموا حتى تروا الهلال، ولا تفطروا حتى تروه.

অর্থ:- আবদুল্লাহ্ ইবনে 'উমর (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেছেন, ‘(রমযানের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখা বন্ধ করবে না।’ [সহীহ মুসলিম ১/৩৪৭]

অন্য হাদীসে আছে, ‘(শা'বানের ২৯ দিন পূর্ণ করার পর) তোমরা যদি রমযানের চাঁদ না দেখ তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।’ [আলমুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক হাদীস : ৭৩০১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭]


মাসআলা:-০৩) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে  রোযা শুরুর জন্য এমন একজন ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট হবে, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত কিংবা অন্তত বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে 'আববাস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন, ‘একজন মরুবাসী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) এর নিকট (রমযানের) চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি একথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) তখন সকলকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ [মুসতাদরাকে হাকিম ১/৪২৪; সুনানে আবু দাউদ ২৩৩৩; সুনানে নাসায়ী ২৪২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৯৫৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮৫]

মাস'আলা:০৪) আকাশ পরিষ্কার থাকলে একজনের খবর যথেষ্ট নয়; বরং এত লোকের খবর প্রয়োজন, যার দ্বারা প্রবল বিশ্বাস জন্মে যে, চাঁদ দেখা গেছে। কেননা, যে বিষয়ে অনেকের আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতা থাকে তাতে দু’ একজনের খবরের উপর নির্ভর করা যায় না। [আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৮]


মাস'আলা:০৫) কোনো ব্যক্তি একাকী চাঁদ দেখেছে, কিন্তু তার সাক্ষ্য গৃহিত হয়নি, এক্ষেত্রে তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখা উত্তম, জরুরি নয়।

এক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু:)এর নিকট এসে বলল, ‘আমি রযমানের চাঁদ দেখেছি।’ উমর (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে অন্য কেউ কি দেখেছে?’ লোকটি বলল, ‘না, আমি একাই দেখেছি।’ উমর রা. বললেন, ‘তুমি এখন কী করবে?’ লোকটি বলল, ‘(আমি একা রোযা রাখব না) সবাই যখন রোযা রাখবে আমিও তখন রোযা রাখব।’ উমর (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) তাকে বাহবা দিয়ে বললেন, ‘তুমি তো বড় ফিকহ ও প্রজ্ঞার অধিকারী।’ [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৬৮; আলমুহাল্লা ৪/৩৭৮]

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, এমন ব্যক্তির জন্য রোযা রাখা জরুরি না হলেও উত্তম হল রোযা রাখা। [বাদায়েউস সানায়ে ২/২২১]

মাস'আলা:০৬) শাবান মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখে রোযা রাখবে না; না রমযানের নিয়তে না নফলের নিয়তে। অবশ্য যে পূর্ব থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিবসে (যথা  সোম ও মঙ্গলবার) নফল রোযা রেখে আসছে, আর ঘটনাক্রমে শাবানের ২৯ ও ৩০ তারিখে ঐ দিন পড়েছে তার জন্য এই তারিখেও নফল রোযা রাখা জায়েয।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : نهي رسول الله عليه وسلم أن يتعجل شهر رمضان بصوم يوم أو يومين، إلا رجل كان يصوم صوما فيأتي ذلك على صومه.

নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেন, তোমরা রমযান মাসের একদিন বা দুই দিন পূর্ব থেকে রোযা রেখো না। তবে কারো যদি পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট কোনো দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে আর ঐ দিন উক্ত তারিখ পড়ে যায় তাহলে সে ঐ দিন রোযা রাখতে পারে।’ [সহীহ বুখারী ১/১৫৬, হাদীস : ১৯১; মুসানাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৫৮, হাদীস : ৭৩১৫; জামে তিরমিযী ২/৩২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৭]

মাসআলা:০৭) রোযার নিয়ত করা ফরয। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামী কালের রোযা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়।

হাদীস শরীফে আছে, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। [সহীহ বুখারী ১/২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৬]

মাসআলা:০৮) ফরয রোযার নিয়ত রাতেই করা উত্তম।

উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাযিআল্লাহু তা'আলা আ'নহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেছেন-

من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له.

যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোযা রাখার নিয়ত করবে না তাঁর রোযা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না। [সুনানে আবু দাউদ ১/৩৩৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯-২৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯]

ওরে মুসলিম কত কাল যাবে তোর ঘুমের ঘোরে 


পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের জয়লাভের মূল কারন মুসলিম নবাবদের বিরুদ্ধে এংলো হিন্দুর প্রচেষ্ঠা। নামকরা হিন্দু পরিবারের সংগে মীরজাফরের আত্মীয়তা ছিল। এজন্য সিরাজ মীরজাফরকে তার অপকর্মের জন্য শাস্তি দিতে সক্ষম হয়নি। (সূত্র: বৃটিশ নীতি ও বাংলার মুসলমান ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, পৃ- ৭০)।

২। নবাব আলীবর্দী খান থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত নবাব সিরাজের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন পদগুলির দায়িত্বে ছিল হিন্দুরা। ঢাকার প্রাদেশিক দেওয়ান ছিল রাজবল্লভ। বিহারের ১ম গভর্নর ছিল জানকীরাম, ২য় গভর্নর ছিল রাম নারায়ন। অর্থ বিভাগের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ছিল জগৎশেঠের, তার সহযোগী ছিল দেওয়ান চিনুরায়, বাবু বীরুদত্ত, কিরাতচাঁদ ও উমিচাঁদ। 
সেনাবাহিনীর প্রধান বিভাগের দায়িত্বে ছিল রায়দুর্লভ রাম, বাবু মানিক চাঁদ, রাজা নন্দকুমার ও মোহনলাল। এদের মধ্যে একজন ব্যতীত বাকী সবাই পলাশীর বিশ্বাসঘাতক হিসাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। পরবর্তী ইতিহাসে দেখা গেছে এদেশের ও ভারতের সকল হিন্দুরা পলাশীর বেনিফিসিয়ারী হয়েছে এবং সর্বস্ব হারিয়েছে মীরজাফর সহ সকল মুসলমানরা। (সূত্র: জাতির উত্থান-পতন, সূত্র: এস,এম, নজরুল ইসলাম পৃ-৩০-৩১)।


আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।-(সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ৪৩)


মাসআলা:০৯) রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোযা হয়ে যাবে।

হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া রা. বলেন, (আশুরার রোযা যখন ফরয ছিল তখন) রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) আসলাম গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি সে বাকি দিন রোযা রাখবে। আর যে খেয়েছে সেও বাকি দিন রোযা রাখবে। কারণ আজ আশুরা-দিবস।’ [সহীহ বুখারী ২০০৭]

আবদুল করীম জাযারী (রাহ:) বলেন, কিছু লোক সকালে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল। তখন উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. বললেন, ‘যে ব্যক্তি (ইতিমধ্যে কিছু) খেয়েছে সে বাকি দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে খায়নি সে বাকি দিন রোযা রাখবে।’ [মুহাল্লা ৪/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬]

মাসআলা:১০) পুরো রমযানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়; বরং প্রত্যেক রোযার নিয়ত পৃথক পৃথকভাবে করতে হবে। কারণ প্রতিটি রোযা ভিন্ন ভিন্ন আমল (ইবাদত)। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি।

হাদীস শরীফে আছে, সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। [সহীহ বুখারী ১/২; আরো দেখুন : আলমুহাল্লা ৪/২৮৫; মাবসূত, সারাখসী ৩/৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫]

মাসআলা:১১) রাতে রোযার নিয়ত করলেও সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-মিলনের অবকাশ থাকে। এতে নিয়তের কোনো ক্ষতি হবে না।

আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেন---

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ

(তরজমা) রমযানের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে। [বাকারা: ১৮৭]

মাসআলা:১২) নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-মঙ্গলবারের রোযার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করা যায়। সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মঙ্গলবারের রোযার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদীস শরীফে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। [আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৭]

মাসআলা:১৩) সাহরী খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নত আদায় হবে।

হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ করেছেন---

تسحروا، فإن في السحور بركة.

অর্থ: তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরীতে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম ১/৩৫০]

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, সাহরী খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরী কর। কারণ যারা সাহরী খায় আল্লাহ্ তা'আলা তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন। [মুসনাদে আহমদ ৩/১২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ৯০১০; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৩৪৭৬]

মাসআলা:১৪) সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করা মাকরূহ যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়।

হযরত 'আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ইরশাদ করেছেন---

إنما معاشر الأنبياء أمرنا أن تعجل فطرنا وأن تؤخر سحورنا، قال الهيثمي رجاله رجال الصحيح.

অর্থ: সকল নবীকে সময় হওয়ার পরপরই ইফতার তাড়াতাড়ি করতে এবং সাহরী শেষ সময়ে খেতে আদেশ করা হয়েছে। [আলমুজামুল আওসাত ২/৫২৬; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৩৬৮]

আমর ইবনে মায়মুন আলআওদী বলেন, সাহাবায়ে কেরাম দ্রুত ইফতার করতেন আর বিলম্বে সাহরী খেতেন। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯০২৫]

মাসআলা:১৫) দেরি না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা মুস্তাহাব।

হাদীস শরীফে আছে--

لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر.

অর্থ: যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে। [সহীহ বুখারী ১/২৬৩]

মাসআলা:১৬) মাগরিবের নামায পড়ার আগেই ইফতার করে নিবে, যেন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করার সওয়াব পাওয়া যায়।

আনাস ইবনে মালিক (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) মাগরিবের নামায পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দ্বারা। আর তাও না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৬৯২]

মাসআলা:১৭) খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে।

من وجد تمرا فليفطر عليه ومن لا يفطر على ماء، فإن الماء طهور.

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেন, ‘যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা পানি হল পবিত্র। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৬৯৪]

আরো দেখুন: [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৫৮৬]


মাসআলা:১৮) ইফতারের সময় দুআ কবুল হয় তাই এ সময় বেশি বেশি দু'আ-ইস্তিগফার করতে থাকবে। বিশেষত এই দু'আ করবে-

اَللهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ. رواه ابن ماجه، وقال البوصيري في الزوائد : هذا هديث صحيح، ورجاله ثقات. 

অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে তোমার সেই রহমতের উসীলায় প্রার্থনা করছি যা সকল বস্ত্ততে পরিবেষ্টিত, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। [সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ১২৫, হাদীস : ১৭৫৩]

আর ইফতার গ্রহণের সময় এ দু'আ পড়বে-

اَللهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلىٰ رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ.

অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার জন্যই রোযা রেখেছিলাম এবং তোমার রিযিক দ্বারাই ইফতার করলাম। [সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৩৫৮]

ইফতারের পর নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) এই দু'আ পড়তেন--

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ. رواه أبو داود، وصححه الحاكم في المستدرك، ولم يتعقبه الذهبي.

পিপাসা দূর হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল আর আল্লাহ্ তা'আলা চান তো রোযার সওয়াব লিপিবদ্ধ হল। [সুনানে আবু দাউদ ১/৩২১, হাদীস : ২৩৫৭; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৫৭৬]

যেসব কারণে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি:⬇⬇

মাসআলা:১৯) রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে।

একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, আমি রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করেছি। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) তাকে কাফফারা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। [দেখুন:- সহীহ বুখারী ৬৭০৯; জামে তিরমিযী ৭২৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭৪৫৭; মুসনাদে আহমদ ২/২৪১]

মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে (যে স্ত্রীসহবাসে লিপ্ত হয়েছিল) কাফফারা আদায়ের সাথে কাযা আদায়েরও আদেশ করেছিলেন। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৪৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬]

মাসআলা:২০) রোযা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে।

হাদীস শরীফে আছে--এক ব্যক্তি রমযানে রোযা রেখে (ইচ্ছাকৃতভাবে) পানাহার করল। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) তাকে আদেশ করলেন, যেন একটি দাস আযাদ করে বা দুই মাস রোযা রাখে বা ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ায়। [সুনানে দারাকুতনী ২/১৯১]

ইমাম যুহরী (রাহ:) বলেন, ‘রমযানে রোযা রেখে যে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করবে তাঁর হুকুম ইচ্ছাকৃতভাবে দিনে সহবাসকারীর অনুরূপ।’ অর্থাৎ তাকে কাযা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। [মাবসূত, সারাখসী ৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬]

মাসআলা:২১) বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। [রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৫]

এই মাসআলার দলীল বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন : ঝাজরু আরবাবির রায়্যান আন শুরবিদ দুখান; তারবীহুল জিনান বিতাশরীহি হুকমি শুরবিদ দুখান, আল্লামা আবদুল হাই লাখনোবী রাহ:

মাসআলা:২২) সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আযান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানা-পিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে কাযা-কাফফারা দু’টোই জরুরি হবে। [সূরা বাকারা : ১৮৭; মাআরিফুল কুরআন ১/৪৫৪-৪৫৫]


যেসব কারণে রোযা শুধু কাযা করতে হয়:


মাসআলা:২৩) অযু বা গোসলের সময় রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোযা অবস্থায় অযু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করবে না।

লাকিত ইবনে সাবিরা (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বলেন---

بالغ في الاستنشاق، إلا أن تكون صائما.

অযু-গোসলের সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও তবে রোযা অবস্থায় নয়। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৬৩ সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৮৫]

সুফিয়ান সাওরী (রাহ:) বলেন, ‘রোযা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং তা কাযা করতে হবে। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৩৮০]

আরো দেখুন:- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৮৪৪-৯৮৪৭; ফাতাওয়া শামী ২/৪০১

মাসআলা:২৪) যা সাধারণত আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. ও ইকরিমা (রাহ:) বলেন, ‘(পেটে) কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। কোনো কিছু বের হওয়ার দ্বারা রোযা ভাঙ্গে না।’ [সহীহ বুখারী ১/২৬০ (তা’লীক); বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪১০]

মাসআলা:২৫) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। [আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬]

যেসব কারণে শুধু কাযা করতে হয়:


মাসআলা:২৬) হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর এটা যে ভয়াবহ গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য।

হাদীস শরীফে কামেচ্ছা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকাকে রোযার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জান। রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার নিকট মেশকের চেয়েও বেশি প্রিয় (আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,) রোযাদার আমার জন্য পানাহার করা থেকে এবং কামেচ্ছা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকে। [সহীহ বুখারী ১/২৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭২; ফাতাওয়া শামী ২/৩৯৯]

মাসআলা:২৭) মুখে বমি চলে আসার পর  ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। [আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৫]

মাসআলা:২৮) রোযা অবস্থায় হায়েয বা নেফাস শুরু হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। পরে তা কাযা করতে হবে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহায় মহিলাদের লক্ষ্য করে বললেন---

أليس إذا حاضت لم تصل ولم تصم قلن بلى، قال : فذلك من نقصان دينها.

মহিলারা তো ঋতুস্রাবের সময় রোযা রাখতে পারে না এবং নামাযও পড়তে পারে না। এটা তোমাদের দ্বীনের অসম্পূর্ণতা। [সহীহ বুখারী ১/৪৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৪০; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ১০০]

ক) পেটের এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে রোযা ভেঙ্গে যাবে, যা দিয়ে ওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে পরে সে রোযার কাযা করে নিতে হবে। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২]

খ) নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে।

গ) মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) থেকে বর্ণিত-

ذكر عنده الوضوء من الطعام، قال الأعمش مرة والحجامة للصائم، فقال : إنما الوضوء مما يخرج وليس مما يدخل، وإنما الفطر مما دخل وليس مما خرج.

শরীর থেকে (কোনো কিছু) বের হলে অযু করতে হয়, প্রবেশ করলে নয়। পক্ষান্তরে রোযা এর উল্টো।রোযার ক্ষেত্রে (কোনো কিছু শরীরে) প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যায়, বের হলে নয় (তবে বীর্যপাতের প্রসঙ্গটি ভিন্ন)। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২]



যে সব কারণে শুধু রোযা কাযা করতে হয়:


মাসআলা:২৯) সুবহে সাদিকের পর সাহরীর সময় আছে ভেবে পানাহার বা স্ত্রীসঙ্গম করলে রোযা  ভেঙ্গে যাবে। তেমনি ইফতারির সময় হয়ে গেছে ভেবে  

সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। [আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১]

মাসআলা:৩০) রোযা রাখা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা করা জরুরি হবে।

অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়ার কারণে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোযা ভেঙ্গে ফেললে কাযা করতে হবে।

হযরত আউন (রাহ:) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রাহ:) রাত্র বাকি আছে ভেবে সাহরী খেলেন। তারপর জানতে পারলেন, তিনি সুবহে সাদিকের পর সাহরী করেছেন তখন তিনি বললেন, ‘আমি আজ রোযাদার নই।’ (অর্থাৎ আমাকে এ রোযার কাযা করতে হবে)। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯]

আলী ইবনে হানযালা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রোযার মাসে হযরত ওমর (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু:) এর নিকট ছিলেন। তাঁর নিকট পানীয় পেশ করা হল। উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ সূর্য ডুবে গেছে ভেবে তা পান করে ফেলল। এরপর মুয়াযযিন আওয়াজ দিল, আমীরুল মুমিনীন! সূর্য এখনো ডুবেনি। তখন হযরত ওমর (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু:) বললেন, ‘যারা ইফতারি করে ফেলেছে তাঁরা একটি রোযা কাযা করবে। আর যারা ইফতারি করেনি তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬]


রোযার কাফফারা আদায়ের নিয়ম:


মাসআলা:৩১) একটি রোযার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখতে হবে। কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোযা রাখতে হবে। পেছনের রোযাগুলো কাফফারার রোযা হিসাবে ধর্তব্য হবে না। তবে মহিলাদের হায়েযের কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই।

ইব্রাহীম নাখায়ী (রাহ:) বলেন, ‘যার উপর কাফফারা হিসাবে  দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখা জরুরি সে যদি মাঝে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোযা রাখতে না পারে, তাহলে আবার নতুন করে রোযা রাখা শুরু করবে। [আলমুহাল্লা ৪/৩৩১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৯৬]


যেসব কারণে রোজা ভাঙে না:


মাসআলা:৩৫) বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েয। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া যাবে না। আর তরুণদের যেহেতু এ আশঙ্কা থাকে তাই তাদের বেঁচে থাকা উচিত।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন, আমরা নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) এর নিকটে ছিলাম। ইতিমধ্যে একজন যুবক এল এবং প্রশ্ন করল, আল্লাহর রাসূল! আমি কি রোযা অবস্থায় চুম্বন করতে পারি? নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বললেন, না। এরপর এক বৃদ্ধ এল এবং একই প্রশ্ন করল। নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বললেন, হাঁ। আমরা তখন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম। নবী কারীম (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছাল্লাম) বললেন, আমি জানি, তোমরা কেন একে অপরের দিকে তাকাচ্ছ। শোন, বৃদ্ধ ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। [মুসনাদে আহমদ ২/১৮০, ২৫০]

হযরত আবু মিজলায (রাহ:) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু)এর নিকট এক বৃদ্ধ রোযা অবস্থায় চুমু খাওয়ার মাসআলা জিজ্ঞাসা করল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর এক যুবক এসে একই মাসআলা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০]

মাসআলা:৩৬) অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোযা ভাঙ্গবে না। তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না।

হাদীস শরীফে আছে, অর্থ : অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তির বমি হলে তাঁর রোযা কাযা করতে হবে না। [জামে তিরমিযী ১/১৫৩, হাদীস : ৭২০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৪]

মাসআলা:৩৭) শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না।

হযরত কাতাদাহ (রাহ:) বলেন, ‘রোযাদারের তেল ব্যবহার করা উচিত, যাতে রোযার কারণে সৃষ্ট ফ্যাকাশে বর্ণ দূর হয়ে যায়। [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/৩১৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩]



আপনার দৈনন্দিন জীবনে দ্বীনের পথে চলার জন্য "মাস'আলা/মাসায়েল" শিখতে (জানতে)যুক্ত হুন নিচে দেওয়া আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।

চ্যানেল লিংক : https://t.me/tenminutesmadrasah

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad