একজন ব্যক্তি হিসাবে আইজ্যাক নিউটন কেমন ছিলেন?

একজন ব্যক্তি হিসাবে আইজ্যাক নিউটন কেমন ছিলেন?

নিউটন মানুষ হিসেবে অন্যরকম কেন ছিলেন?

একজন ব্যক্তি হিসাবে আইজ্যাক নিউটন কেমন ছিলেন

ছবি সূত্র : getdrawings.com

এক মেয়ে মায়ের জন্য বর খুঁজছে। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, তাও আবার বাঙালি মেয়ে। মায়ের বিয়ে কেন? মা তো অবিবাহিত নয়! এখানেই আসল মজা! মায়ের যে বিয়েই হয়নি!


মায়ের বিয়ে হয়নি তো মেয়ে এলো কোত্থেকে?


বিয়ে না করেও কি গর্ভধারণ করা যায় না? বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতিতে বাধা থাকলেও প্রকৃতির নিয়মে তো কোনো বাধা নেই। অবশ্য সেই গর্ভধারণকে সমাজ ‘অবৈধ বলবে’, গর্ভজাত সন্তানকে বলবে ‘অবৈধ সস্তান’। ইউরোপ-আমেরিকায় বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ আইনত অবৈধ নয়। কিন্তু আমাদের বাঙালি কিংবা উপমহাদেশের সমাজ-সস্কৃতিতে এর চল নেই। তাই নৈতিকভাবে এ বিষয়টা মেনে নিতে বেশিরভাগেরই কষ্ট হবে। আর সমাজের চোখে যারা ‘অবৈধ সন্তান’ তাঁদের বেড়ে উঠতে হয় চরম মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ‘মায়ের বিয়ে’ সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে রূপদানকারী মেয়েটা জানে সে বাবা-মায়ের বিবাহবহির্ভূত সন্তান। এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপও নেই। বরং মায়ের একাকীত্ব তাকে পীড়া দেয়, তাই হৈ হৈ করে মায়ের বিয়ের জন্য বর খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। আর জন্ম হয় না হাস্য-রসাত্মক ঘটনার। বাঙালি সমাজে এখন অনেকেই এই সাংস্কৃতিকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত সমাজে। কিন্তু তিন শ বছর আগে ইউরোপেও ব্যাপারটার স্বীকৃত ছিল না।


শিশুটা আলোর মুখ দেখে একটু আগেভাগেই। এত কম সময়ে সাধারণত ভূমিষ্ট হয় না শিশু। কিন্তু কপালের ফেরে বেশ কয়েকমাস আগেই জন্ম হলো শিশুটির। পৃথিবীর প্রথম আলো চোখে পড়লেই চিৎকার দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় শিশুরা। কিন্তু এই শিশু নট-নড়ন চড়ন। কান্না দূরে থাক, বুকে প্রাণের স্পন্দনই নেই। আকারে খুব ছোট আর লিকলিকে। ধাত্রীর মুখ কালো হয়ে গেছে, লিঙ্কনশায়ারের উলসথর্প গাঁয়ের ধনী গৃহস্থ বধূটি কিনা মৃত শিশুর জন্ম দিলেন! বেচারির এখন কী হবে! গর্ভধারণের কয়েক মাসের মধ্যে স্বামীকে হারিয়েছেন। গর্ভের শিশুটিও ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে! আফসোস করতে করতে দাইমা গৃহবধুটিকে শুশ্রুশায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তার আগে মৃত শিশুটাকে রেখে এসেছেন একটা ছোট্ট পাত্রের মধ্যে।


ধাত্রী যখন মায়ের সেবা-যত্নে যখন গভীর মনোযোগী তখন সেই পাত্র ভেতর থেকে বিকট চিৎকার। ভড়কে গেলেন ধাত্রী। যাকে তিনি মৃত ভেবে ফেলে এসেছেন সেই শিশুই কিনা চিৎকার দিয়ে কাঁদছে! দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে তুলে নিলেন। তারপর চলল শুশ্রুসা। শিশুটি তখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও তাঁর মেয়াদ কদ্দিন হবে কে জানে?


শিশুটি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই পদার্থবিজ্ঞান সাবালক আর স্মার্ট হয়েছিল। তাঁর হাতেই জন্ম হয়েছিল বলবিদ্যা আর মহাকর্ষ সূত্রের। কিন্তু আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো হয়নি তাঁর জীবন। ছাত্রজীবনেই ভীষণ একাষেঁড়ে আর বদরাগী ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন, বন্ধুকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার রেকর্ডও তাঁর আছে। বয়স যত বেড়েছে তত বেশি বদ হয়েছে নিউটনের মেজাজ। কিন্তু কেন এমন হলেন তিনি?


নিউটনের বাবা-দাদা ছিলেন গৃহস্থ। জমিদার বললেও চলে। লেখাপড়ার চল তেমন ছিল না নিউটন পরিবারে। অঢেল সম্পত্তি! এত আর কে খাবে? কী দরকার জমীদারি ছেড়ে গভঃর্মেন্টের চাকরি করার! নিউটনের মাও চাইতেন তাঁর ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে চাষবাষে মন দিক। এই ব্যাপারটাই নিউটনের ভালো লাগত না। পড়াশোনায়, কার্যকারণে, বিজ্ঞানে, গণিতে তাঁর রাজ্যের আগ্রহ। সেই আগ্রহে কিনা জল ঢেলে দিতে চান মা। সুতরাং মন বিষিয়ে ওঠে নিউটনের। কিন্তু মন বিষানো এই তাঁর প্রথম নয়। সেই ছেলেবেলায় যখন মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন তখন থেকেই মায়ের প্রতি ভীষণ খ্যাপা নিউটন।


লেখাটি বিজ্ঞানীদের গোপন জীবন বইয়ের অংশবিশেষ। প্রকাশক : বাতিঘর, দাম : ৩৪৭ টাকা। বইটি বাতিঘরের চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট ব্রাঞ্চে পাওয়া। ঘরে বসে কিনতে পারবের রকমারি থেকেও


খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিলেন হান্না নিউটন। পেয়েছিলেন স্বামীর অঢেল সম্পত্তি। স্বামীর রেখে যাওয়া ভালোবাসা, শোক আর শিশু পুত্রকে বুকে ধরেই পার করে দিতে চেয়েছিলেন বাকি জীবন। কিন্তু সব সময় আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে না মানুষ। স্বামীহারা হান্না নিয়মিত যাতায়াত করেন গীর্জায়। স্মিথ নামে এক পাদ্রী ছিলেন সেখানে। তাঁর কাছে ধর্মের বাণী, উপদেশ শুনে মনটা হালকা করতে যেতেন হান্না। নিজে স্বামীহারা, অন্যদিকে স্মিথেরও সদ্য পত্নিবিয়োগ হয়েছে। দুজন নিঃসঙ্গ নর-নারী নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করছেন, ধর্মের বাণী শোনাচ্ছেন, শুনছেন। একাকীত্ব আর কষ্টগুলোও ভাগ করে নিচ্ছেন। এ থেকেই পরস্পরের প্রতি একটা সহানূভতি তৈরি হবে, সেটাই নিয়ম। আর সেই সহানুভূতি প্রেমে রূপান্তরিত হতেও সময় নেয়নি। প্রথমে মন দেওয়া-নেওয়া, পরে বিয়ে। টাকা-পয়সার প্রতি একটু বেশিই লোভ ছিল হান্নার। বিয়ের সময় স্মিথের কাছ থেকে পণ হিসেবে নিয়েছিলেন চাষের জমি।


হান্না যখন স্মিথকে বিয়ে করছেন, তখন নিউটনের বয়স সবে চার। বিয়ের পর হান্না স্মিথের সঙ্গে চলে গেলেন শ্বশুরবাড়ি। আর শিশু নিউটনকে রেখে গেলেন তাঁর মা অর্থাৎ নিউটনের নানির জিম্মায়। মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হলেন। নানা-নানির পরিবারে অনেকটা নিভৃতে কাটছিল নিউটনের দিন। স্কুলে ভর্তি করানো হলো তাঁকে। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে মায়ের চলে যাওয়টা আজীবন মানতে পারেনি নিউটন। স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়াশোনাও চলছিল বেশ। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিশতেন না। একাকী কী যেন ভাবতেন।


বিয়ের আট বছরের মাথায় স্মিথও মারা যান। সুতরাং দ্বিতীয়বার বিধবা হয়ে হান্না আবার ফিরে আসেন উলসথর্পে। নিউটনকে বলেন, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যেন গ্রামে ফিরে আসে এবং চাষবাষে মন দেয়। বাধ্য হয়ে লেখপড়া ছেড়ে তাঁকে ফিরে আসতে হলো উলথর্পে। কিছুদিনি কৃষিকাজ করলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে যিঁনি মহাবিজ্ঞানী হবেন, তার কি কৃষিকাজে মন বসে! তাই নিউটন আসার পর জমিতে-খামারে ফলন তো হচ্ছিলই না, উল্টে বরং ক্ষতির অঙ্কটা বাড়ছিল দিনকে দিন।


নিউটনের মামা হান্নাকে পরামর্শ দিলেন ছেলেকে বাড়ি থেকে বিদেয় করে স্কুলে ভর্তি করানো হোক। কিন্তু হান্না ছেলের পেছনে টাকা খরচ করতে মোটেও রাজি নন। ঠিক সে সময় নিউটনের এক শিক্ষকের কাছ থেকে আসে লোভনীয় এক প্রস্তাব। স্কুলে ফেরৎ যদি পাঠানো হয় নিউটনকে, খরচ সব ওই শিক্ষক দেবেন। নিউটনকে স্কুলে ফের ভর্তি করানো হলো। কিন্তু বছরে মাত্র দশ পাউন্ড করে খরচ যোগাবেন হান্না। বাকিটা নিউটনকেই জোগাড় করে নিতে হবে। আর হ্যাঁ, শিক্ষকের দানও নেওয়া চলবে না।


নিউটন ভর্তি হলেন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। কিন্তু মায়ের দেওয়া টাকায় তো চলবে না। তখন ট্রিনিটি কলেজের সাবসাইজার ব্যবস্থা চালু ছিল। এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য কলেজে কোনো টাকা দিতে হত না। কিন্তু অনেকটা চাকরের মতো ফুট-ফরমায়েশ খাটতে হত শিক্ষার্থীকে। কলেজের একেকজন ফেলোর একজন করে এ ধরনের চাকর থাকত। এই ফেলোদের সহকারীর কাজ করতেই হতো এমনকী তাঁদের মল-মুত্রও পরিষ্কার করতে হত সাবসাইজারদের। অথচ নিউটনের মা বিশাল সম্পত্তির মালিক, বছরে তাঁরা আয় সাত শ পাউন্ডেরও বেশি!


এসব ঘটনা যেমন নিউটনকে রাগী-বদমেজাজী করে তুলেছিল। তেমনি মহাবিজ্ঞানী হওয়ার পথেও বড় ভূমিকা রেখেছিল বলেই মনে করেন অনেকে। নিউটন ভীষণ একাষেঁড়ে ছিলেন, এ কথা কারও অজনা নয়। কিন্তু একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল তাঁর। না, সেই বন্ধু কোনো মেয়ে বা নারী নন। কলেজ জীবনে ঘনিষ্টতা হয় নিকোলাস উইকিন্স নামে এক তরুণের সঙ্গে। তাঁরা দুজনেই নিজ নিজ রুমমেট দিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁদের ঘনিষ্টতা হয়। এক সময় তাঁরা দুজন একটা রুমে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকদিন তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। এই বিষয়টাকেই অনেকে ভালো চোখে দেখেননি। তাই সেকালে অথবা একালের কোনো সময় কিছু লোক গুজব ছড়িয়েছিল নিউটন আর উইকিন্স দুজনেই আসলে সমকামী ছিলেন, তাই রুম শেয়ারের আড়ালে লিভ টুগেদার করতেন। এ ঘটনা সত্য কিনা যেমন জোর দিয়ে বলা যায় না। আবার মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই। আর সত্যিও যদি হয়, তাহলে ছেলেবেলায় মায়ের বিয়েটাকেও এর জন্য দায়ী করা যায় চোখবুজে।


সূত্র: ব্রিটানিকা ডট কম

Writer: Abdul Gaffar Rony

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad